Home রাজনৈতিক ‘বিজেপি এলে মানুষ দূর, পাখিও ঢুকতে পারবে না’ অনুপ্রবেশ নিয়ে হুঙ্কার অমিত শাহর

‘বিজেপি এলে মানুষ দূর, পাখিও ঢুকতে পারবে না’ অনুপ্রবেশ নিয়ে হুঙ্কার অমিত শাহর

by Kolkata Today

কোচবিহার, ১১ ফেব্রুয়ারি : বিধানসভা নির্বাচনের আগে ফের বাংলায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বৃহস্পতিবার কোচবিহারে এসে প্রথমে মদনমোহন মন্দিরে পুজো দেন অমিত শাহ। তারপর রাসমেলা ময়দানের কাছেই পঞ্চানন বর্মার মূর্তিতে মাল্যদান করেন। সেখান থেকে যোগ দেন রাজনৈতিক জনসভায়। জনসভা শেষে রথযাত্রার সূচনা করেন তিনি। তাঁর প্রচুর অনুগামী সমর্থক ভিড় জমিয়েছিলেন সভাস্থলে।

‘বিকাশ’ না ‘বিনাশ’— বাংলার ভোটে এই বিকল্প দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। শাহের মতে, ‘বিকাশ’-এর প্রতীক নরেন্দ্র মোদী। আর বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হলেন ‘বিনাশ’-এর। বৃহস্পতিবার কোচবিহারের রাস ময়দানের বিশাল সভা থেকে জনগণকেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার দিলেন বিজেপি নেতা। জনতাকে বললেন, আসন্ন বিধানসভা ভোটে
আপনারা এই দুই মডেলের মধ্যে কোনও একটা বেছে নিন। অমিতের বক্তব্য, ‘মমতাদিদি একজন ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রী। সময় এসেছে তাঁকে বদলে দেওয়ার। আপনারা এমন সরকার বাংলায় বানাবেন না, যারা সারাক্ষণ কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে ঝগড়া করে! মোদী’জির হাতে বাংলাকে তুলে দিন। তারপর কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বাংলাকে জুড়ে ‘ডবল ইঞ্জিন’-এ বাংলার উন্নয়ন হবে।’ এর পাশাপাশি অনুপ্রবেশ, দুর্নীতি-সহ একাধিক বিষয়ে তৃণমূল এবং মমতা সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগা তো ছিলই। অমিতের কথায়, ‘বাংলার ভোট এবার ঐতিহাসিক হতে চলেছে। মমতাদিদির দাঙ্গাবাজদের সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের দলের কর্মীরা লড়বেন এবং জিতবেন।’ একধাপ এগিয়ে তাঁর চ্যালেঞ্জ, ‘কোই মাই-কা-লাল কা হিম্মত নহি হ্যায় কে ভোট কো প্রভাবিত করেঁ!’ অর্থাৎ, কারও হিম্মত হবে না ভোটকে প্রভাবিত করার।

প্রত্যাশিতভাবেই কোচবিহারের জনসভায় রাজ্য সরকার এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে আগাগোড়া আক্রমণাত্মক ছিলেন শাহ। তিনি বলেন, ‘মোদীজি তাঁর সব কা সাথ, সব কা বিকাশ— এই মন্ত্রে সারা দেশের উন্নয়ন করছেন। সব সমাজ, সব সম্প্রদায়ের কথা মাথায় রেখে নানা উন্নয়নমুখী প্রকল্প তৈরি করছেন।’ অর্থাত্‍, বোঝাতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী ‘বিকাশের কান্ডারি’। তাঁর কথায়, ‘১০ বছর মমতাদিদিকে দিয়েছেন। এবার পাঁচটা বছর মোদী’জিকে দিন। কথা দিচ্ছি, পাঁচ বছরের মধ্যে সোনার বাংলা বানিয়ে দেখাব।’ কিন্তু মমতাকে ‘বিনাশ’-এর প্রতীক কেন বলছেন শাহ? তাঁর যুক্তি, কেন্দ্রের একাধিক প্রকল্প এই রাজ্যে চালু না করা নিয়ে। শাহের কথায়, ‘এ রাজ্যের কৃষকদের বছরে ৬ হাজার টাকা পাওয়ার অধিকার ছিল। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মমতা। অনেক দেরি হয়েছে। তবে চিন্তা করবেন না। বিজেপি ক্ষমতায় এলে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই পিএম কিসান সম্মান নিধির টাকা বকেয়া সমেত কৃষকদের দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে।’ ঘটনাচক্রে, কয়েক দিন আগে হলদিয়ায় এসে এই একই প্রতিশ্রুতিই দিয়ে গিয়েছেন মোদী। পাশাপাশিই, ‘আয়ূষ্মান ভারত’ প্রকল্প রাজ্যে কার্যকর না করে সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করার অভিযোগও এনেছেন শাহ। বোঝাতে চেয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রকল্প চালু না করে এবং দুর্নীতি-তোলাবাজি করে রাজ্যের ‘বিনাশ’ করছেন মমতা।

বিনাশের পাশাপাশি অনুপ্রবেশ, একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে মমতার তোষণ করা নিয়েও তোপ দেগেছেন শাহ। তাঁর কথায়, ‘বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় এলে মানুষ তো দূর, পায়রাও অনুপ্রবেশ করতে পারবে না! এখানে দুর্গাপুজো, সরস্বতী পুজোর অনুমতি পাওয়া যায় না। তা হলে কি পুজো করতে আদালতে যেতে হবে? মমতা দিদি, এটা হিন্দুস্থান, এখানে দুর্গাপুজো, সরস্বতী পুজো, রামনবমী সবই হবে।’ ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের সময় ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান শুনে মমতার মেজাজ হারানোর নজির রয়েছে। পরবর্তীকালে সামলেও নিয়েছেন তিনি। তবে সম্প্রতি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নেতাজির জন্মজয়ন্তীর সরকারি অনুষ্ঠানে দর্শকাসন থেকে সেই স্লোগান দেওয়ার প্রতিবাদে ভাষণ দেননি মমতা। তা নিয়েও আক্রমণ করেছেন শাহ। বলেছেন, ‘এখানে এমন অবস্থা, যেন ‘জয় শ্রীরাম’ বলা অপরাধ। এখানে ‘জয় শ্রীরাম’ বলবেন না তো কি পাকিস্তানে গিয়ে বলবেন!’ তার পর লঘু স্বরে যোগ করেছেন, ‘আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি, ভোট শেষ হতে হতে মমতাদিদিও ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে শুরু করবেন।’

Related Articles

Leave a Comment