Home ভিডিও তির বেঁধা পাখি আর গাইবে না গান চলে গেলেন কিংবদন্তি শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়

তির বেঁধা পাখি আর গাইবে না গান চলে গেলেন কিংবদন্তি শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়

by Kolkata Today

কলকাতা টুডে ব্যুরো: বাঙালিরা আজ স্বর্ণ যুগের অবসান ।মঙ্গলবার ৯০ বছর বয়সে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন সংগীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। সন্ধ্যে ৭টা৩০মিনিটে আচমকাই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এবং মাল্টিপল অরগ্যান ফেলিয়র করে চির নিদ্রায় চলে গেলেন তিনি। এই ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাঙ্গালির কণ্ঠটাই বোধ হয় কেউ রোধ করে দিল মাত্র দশ দিন আগেই মারা গিয়েছেন ভারতের নাইটেঙ্গেল লতা মঙ্গেশকর । লতা জি চলে যাওয়ার পর বাঙালি হয়ত কোথাও না কোথাও ভেবে ছিল যে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় হয়ত আবার সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন কিন্তু তা আর হল না । যে মানুষ টি শঙ্খ বাজিয়ে ঘরে লক্ষ্মী আনতেন যে মানুষটি কি মিস্টি দেখ মিস্টি সকাল আনতেন তিনি আজ আমাদের থেকে অনেক দূরে চলে গেলেন।

কিংবদন্তী শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় মৃত্যুর সঙ্গে বাঙ্গালির জীবনের স্বর্ম্ন যুগটা যেনো সাদা কালো ফ্রেমে বন্দি হয়ে গেলো। আমরা হারিয়েছি মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়কে হারিয়েছি মান্না দে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে আর সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সাথে আজ হয়ত বাঙ্গালির কণ্ঠ টাই হারিয়ে গেলো।

রোমান্টিক গান হোক বা ভক্তিগীতি রামধনুর পাতায় পাতায় রঙ ঝড়িয়ে তিনি আজ সাদা কালো ফ্রেমে বন্দি।

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় কলকাতার ঢাকুরিয়াতে ৪ অক্টোবর ১৯৩১ সালে রেলের কর্মকর্তা নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এবং হেমপ্রভা দেবীর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছয় সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলেন।এবং তাঁরা ১৯১১ সাল থেকে ঢাকুরিয়াতে বসবাস করতেন ।

পণ্ডিত সন্তোষ কুমার বসু, অধ্যাপক এ টি ক্যানন এবং অধ্যাপক চিন্ময় লাহিড়ীর নিকট তিনি সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ নেন। তবে তার গুরু ছিলেন উস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খান, তার পুত্র উস্তাদ মুনাওয়ার আলী খান, যার অধীনে তিনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত আয়ত্ত করেছিলেন।

যদিও তিনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে প্রশিক্ষিত, তবুও তার বেশিরভাগ কাজ বাংলা আধুনিক গানে। ১৯৫০ সালে তারানা চলচ্চিত্রে একটি গান দিয়ে তিনি মুম্বাইতে হিন্দি গান গাওয়া শুরু করেন। তিনি ১৭টি হিন্দি চলচ্চিত্রে নেপথ্য গায়িকা হিসেবে গান গেয়েছিলেন।

১৯৬৬ সালে তিনি বাঙালী কবি শ্যামল গুপ্তকে বিয়ে করেন। শ্যামল তার অনেক গানের জন্য কথা লিখে দিয়েছিলেন।

তার সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটি ছিল হেমন্ত মুখার্জীর সাথে, যার সাথে প্রাথমিকভাবে বাঙালি চলচ্চিত্রগুলির জন্য নেপথ্য গায়িকা হিসাবে তিনি বেশ কয়েকটি গান গেয়েছিলেন। হেমন্ত ও সন্ধ্যা বাংলার মহানায়ক উত্তম কুমার এবং তার অসংখ্য নায়িকা জোড়াগুলির নেপথ্য কণ্ঠস্বর হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন, বিশেষত অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের কণ্ঠে। হেমন্ত মুখার্জির রচনা ছাড়াও রবিন চট্টোপাধ্যায় ও নচিকেতা ঘোষের সঙ্গে তিনি অনেক কাজ করেন।

১৯৭১ সালে ‘জয় জয়ন্তী’ এবং ‘নিশিপদ্ম’ ছবিতে গান গেয়ে শ্রেষ্ঠ গায়িকা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। গান দুটি হল – আমাদের ছুটি ছুটি এবং ওরে সকল সোনা মলিন হল। এছাড়াও ২০১১ সালে ভারত সরকার তাঁকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ উপাধিতে সম্মানিত করে। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হয়। তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।

গত ২৬ জানুয়ারি বুধবার সন্ধ্যা থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই প্রবাদ প্রতিম সঙ্গীতশিল্পী। পর দিন তাঁকে গ্রিন করিডোর করে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছিল তাঁর। ঘটনাচক্রে তার দু’দিন আগেই কেন্দ্রের পদ্ম সম্মান প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি।

Topics

Sandhya Mukherjee Legendary Singer Bengali Songs  Entertainment Kolkata

Related Articles