কলকাতা টুডে ব্যুরো: “অবিলম্বে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষকে গ্রেফতার করতে হবে। হেফাজতে নিয়ে তদন্ত করতে হবে। কোন কারণে তাঁর সম্পত্তির দলিল নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত জেলবন্দি প্রসন্ন রায়ের কাছে কেন পাওয়া যায়? CBI কেন শুরুতে Seizure List গোপন করতে গেল?
ঠিক সেই জায়গা থেকেই নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে নিরপেক্ষ তদন্তের প্রশ্ন ওঠছে। আর সেটা করতে হলে দিলীপ ঘোষকে গ্রেফতার করুক ED-CBI।
তৃণমূলের ক্ষেত্রে আগে গ্রেফতার। কিন্তু এখানে সিজার লিস্টের পরও কেন গ্রেফতার নয় দিলীপ ঘোষ? প্রসন্নর সঙ্গে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে হবে। দিলীপ ঘোষের সম্পত্তির উত্স কী? কেন দিলীপবাবুর সম্পত্তির দলিল প্রসন্নর বাড়িতে? দিলীপ ঘোষ প্রভাবশালী। তিনি বাইরে থেকে প্রভাব খাটাবেন। তাই হেফাজতে নিয়ে জেরা করা উচিত।” নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় “মিডলম্যান” প্রসন্ন রায়ের সঙ্গে দিলীপ ঘোষের আঁতাত, লিঙ্ক, সেতুবন্ধন স্পট দাবি করে এমনই মন্তব্য করলেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক Kunal Ghosh। তৃণমূলের আশঙ্কা বিজেপির আরও নেতা এই দুর্নীতি কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। সেগুলি প্রকাশ করা হচ্ছে না।
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে অভিযুক্ত জেলবন্দি প্রসন্ন রায়ের বাড়িতে পাওয়া গিয়েছে দিলীপ ঘোষের এবছর এপ্রিল মাসে একটি জমি কেনার দলিল। সিবিআই প্রসন্নর বাড়িতে থেকে যে নথি বাজেয়াপ্ত করেছিল, সম্প্রতি তার সিজার লিস্ট আদালতে জমা দেয়। সেখানেই এই তথ্যের উল্লেখ্য রয়েছে। আর বিষয়টি সামনে আসার পরই রাজনৈতিক মহলে তোলপাড়। তিনি যে প্রসন্নর পূর্ব পরিচিতি এবং প্রসন্নর বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া দলিলটি যে তাঁর, সেটা অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন দিলীপবাবু।
এদিন সাংবাদিক বৈঠক থেকে দিলীপ ঘোষের গ্রেফতারের দাবি করে কুণাল ঘোষ বলেন, “আমরা লক্ষ্য করেছি, কোনও অভিযোগের ছুতোতে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে কুত্সা করতে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে তাঁদের বাড়ি পাঠানো একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সিবিআই-ইডির বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করে দিয়েছে কেন্দ্র। একটা চাপ তৈরির খেলা চলছে। তদন্তে নিরপেক্ষতা থাকলে স্বাগত। পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকা থাকলে আমরা প্রতিবাদ করছি। নারদে এক পুলিশ অফিসার গ্রেফতার হয়েছে। বিজেপি হেরেছে বলে তৃণমূলের নেতাদের গ্রেফতার করেছে। কিন্তু শুভেন্দুর বাড়ি সিবিআই যায়নি। সিবিআই বেছে বেছে বেছে তৃণমূল নেতাদের বাড়ি যাচ্ছে। নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত প্রসন্ন রায় নামের লিংকম্যানের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে যে নথি মিলেছে তাতে দিলীপ ঘোষের জমির দলিল। সিবিআই উদ্ধার করেছে। আদালতে জমা দিল। কিন্তু প্রথমে গোপন করল। সিজার লিস্টে দিল না। আরেকজন অভিযুক্তের আইনজীবী যখন প্রশ্ন তুললেন, তখন চাপে পড়ে জমা দিল। যার বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের এত অভিযোগ, তার বাড়িতেই দিলীপ ঘোষের দলিল? সেই দলিল প্রসন্ন রায়ের বাড়িতে কী করে যায়? আমরা লক্ষ্য করলাম সিজার লিস্টে উঠে আসার পর সেটা গোপন করা হয়েছে। আদালতে বলার পর তা দেখানো হয়েছে। অবিলম্বে দিলীপ ঘোষকে গ্রেফতার করতে হবে। তৃণমূল নেতাদের ক্ষেত্রে কথায় কথায় নোটিশ পাঠিয়ে ডেকে আনা হয়, গ্রেফতার করা হয়। তাহলে দিলীপ ঘোষকে নয় কেন? কী কারণে প্রসন্নর বাড়িতে দলিল? যেখানে বিজেপি গ্রেফতারির দাবি তুলছে, তাহলে এই ঘটনায় দিলীপের গ্রেফতারি চাই।” কুণালের আরও প্রশ্ন, “প্রসন্ন যদি খারাপ লোক হয়। দুর্নীতিগ্রস্ত হয়, তাহলে দিলীপবাবুর সঙ্গে তার কীসের সম্পর্ক? কেন তার বাড়ি গেলেন দিলীপবাবু?
তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি Jayprakash Majumder এর দাবি, একটা দিলীপ ঘোষের নাম বেরিয়ে এসেছে, কিন্তু বিজেপির আরও নেতা-নেত্রীরা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। অনেক বেনামী সম্পত্তি উদ্ধার হচ্ছে বলে দাবি করছে সিবিআই-ইডি। সেসব বেনামী সম্পত্তি বিজেপি নেতাদের নয় তো? যা আড়াল করার হয়তো চেষ্টা করা হচ্ছে। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের সময় আসানসোল স্টেশনে দিলীপ ঘোষের তত্কালীন আপ্তসহায়কের কাছ ১কোটি টাকা নিয়ে ধরা পড়ল। কিন্তু সেসব নিয়ে আর নাড়াচাড়া হল না। দিলীপবাবুর সেই আপ্তসহায়কগৌতম চট্টোপাধ্যায় এখনও বহাল তবিয়তে ঘোরাফেরা করছে।”
এদিন আরও একটি বিস্ফোরক অভিযোগ করেন জয়প্রকাশ মজুমদার। দিলীপ ঘোষের বর্তমান আপ্তসহায়কের নাম দেব। এই নামটি সম্প্রতি কয়লা ও গরু পাচারের খাতায় দেখা গেছে। সেই নামের অপভ্রংশ করে অন্য কাউকে হেনস্থা করা হচ্ছে না তো? প্রশ্ন তোলেন জয়প্রকাশ মজুমদার।