২১শে ফেব্রুয়ারি, বাংলা ভাষা দিবস | International Mother Language Day
প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি, বাংলা ভাষা দিবস বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও উদ্দীপনার সাথে পালিত হয়। এই দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এটি 1952 সালের বাংলা ভাষা আন্দোলনের সময় বাঙালি ছাত্রদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) একমাত্র সরকারি ভাষা হিসেবে উর্দুকে চাপিয়ে দেওয়ার পাকিস্তান সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। 21শে ফেব্রুয়ারি, 1952 সালে, ছাত্র ও কর্মীরা ঢাকায় (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী) বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে সমাবেশ করে। দুঃখজনকভাবে, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের উপর পুলিশ গুলি চালালে অনেকে প্রাণ হারায়।
বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম সরকারী ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়
সেই দুর্ভাগ্যজনক দিনে আত্মত্যাগ একটি আন্দোলনের জন্ম দেয় যা অবশেষে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম সরকারী ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। এই তাৎপর্যপূর্ণ বিজয় শুধু বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিচয়ই রক্ষা করেনি বরং বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ভিত্তিও তৈরি করে, যা শেষ পর্যন্ত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় পরিণত হয়।
আজ, বাংলা ভাষা দিবস ভাষাগত বৈচিত্র্য এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গুরুত্বের স্মারক হিসাবে কাজ করে। এটি বাংলা ভাষার সমৃদ্ধ সাহিত্য ঐতিহ্য উদযাপন করার একটি দিন, যা কবিতা, গদ্য, সঙ্গীত এবং শিল্পের সমৃদ্ধ উত্তরাধিকার নিয়ে গর্ব করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী কাজ থেকে শুরু করে তসলিমা নাসরিন এবং হুমায়ূন আহমেদের সমসাময়িক লেখা পর্যন্ত, বাংলা সাহিত্য সারা বিশ্বের শ্রোতাদের অনুপ্রাণিত ও বিমোহিত করে চলেছে।
সাহিত্য ঐতিহ্যকে তুলে ধরার জন্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
এই শুভ দিনে বাংলা ভাষা ও এর সাহিত্য ঐতিহ্যকে তুলে ধরার জন্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সেমিনার এবং আলোচনার আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করতে এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বাংলা ভাষার প্রতি গর্ব ও উপলব্ধি জাগানোর জন্য বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
আমরা যখন বাংলা ভাষা দিবস উদযাপন করি, তখন আসুন বাংলার ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রচারে আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করি। আসুন আমরা তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই যারা তাদের মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকারের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, এবং আসুন আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য বাংলা ভাষার ঐশ্বর্যকে লালন ও উদযাপন করি।