Home বিনোদন Aparajito : অনীক এর ‘হরেক আবদার

Aparajito : অনীক এর ‘হরেক আবদার

by Soumadeep Bagchi

আবদারেরও সিমা থাকে ।’ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে নন্দনে ওনার কাট আউট নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন, তারপরেও এই নন্দনে ওনার ফিল্ম দেখাতে হবে..! আবদার নয়ত কি, বলুন তো..?
ঘোষিত বামপন্থী ফিল্ম পরিচালক অনীক দত্ত। এর আগে ‘ভবিষ্যতের ভূত’ ছবি নিয়েও তাঁকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এবার তাঁর ‘অপরাজিত’ ছবিটিও জায়গা পেল না নন্দনে, মোদ্দা কথা তো এটাই..

 

 

সত্যজিৎ রায়ের ১০১তম জন্মবর্ষে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পরিচালক অনীক দত্ত নির্মাণ করেছেন ‘অপরাজিত।’ কী করে মাঝপথে বন্ধ হয়ে গিয়ে, শেষ পর্যন্ত বিধানচন্দ্র রায়ের আমলে সরকারি সাহায্যে পথের পাঁচালী তৈরি হল, তারই কাহিনী। কিন্তু সত্যজিৎ রায়ের হাতে উদ্বোধন হওয়া, তারই স্বপ্নের নন্দন প্রেক্ষাগৃহে অপরাজিত মুক্তি পায়নি! এখানেই বিতর্ক..

 

 

রাজ্য সরকার চায়নি তাই হয়নি, সোজা কথা। যার সমালোচনা করেছেন এই ফিল্মে বিজয়া রায়ের ভূমিকায় অভিনয় করা সায়নী ঘোষও। হ্যাঁ সায়নী ঘোষ, যুব তৃণমূলের সভানেত্রী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছের লোক। সেই সায়নী…

 

 

টলিউডের বড় বড় অভিনেতা পরিচালকরা যথারীতি চুপ। এজেণ্ডা গুলিয়ে গেলে মুশকিল, বোঝাবুঝিতে সমস্যা হয়। দিদি রেগে যাবে কিন্তু এই নিয়ে কিছু বললে। সত্যজিতকে নিয়ে ছবি বলে নয়, অনীক দত্তের ছবি বলেই ‘অপরাজিত’র নন্দনে জায়গা নেই…

 

 

মনে রাখতে হবে নন্দনের পুরো নাম নন্দন আর্ট ফিল্ম থিয়েটার। কিন্তু দেবের ‘কিশমিশ’, সোহমের কলকাতার হ্যারি, ও মিমি চক্রবর্তীর ‘মিনি’ নন্দনে শো পেয়েছে। যারা বলেন নন্দনে শুধুমাত্র আর্ট ফিল্ম ও ফ্যামিলি ড্রামা চলে, তাদের জানা উচিত, দেবদার অ্যাকশন কমার্শিয়াল সিনেমা ‘কিডন্যাপ’ও এর আগে নন্দনে শো পেয়েছে। শুধু তাই নয় বনি ও কৌশানির সাধারণ মানের রোমান্টিক ফিল্ম ‘গার্লফ্রেন্ড’ সিনেমাটির রিলিজ দেওয়া হয়েছিল নন্দনে, যে সিনেমার গল্পে মাথামুন্ডু কিচ্ছু ছিল না।

 

 

নন্দনে ছবি দেখানোর পর, ছবিটি নন্দন কর্তৃপক্ষের পছন্দ হওয়া সত্ত্বেও একটাও শো পাচ্ছে না অপরাজিত। যেখানে মৈনাক ভৌমিকের আড়াই ঘন্টার সিরিয়াল ‘মিনি’, লোকে হেঁচে-কেশেও হজম করতে পারছে না, সেই ছবির শো চালিয়ে রাখা হয়েছে! কেন হয়েছে সেটা আপনারা জানেন, আপনারা বুদ্ধিমান। কিশমিশ, মিনি, কোলকাতার হ্যারি এবং অভিযান, এই চারটি ফিল্ম চলবে। অনীকের অপরাজিত চলবে না..

 

 

নন্দনে অপরাজিত শো পায়নি, এর পিছনে কি কোন কাঠিবাজি আছে ? বাকি দুটো সরকারি হল নজরুল তীর্থ আর স্টার থিয়েটারে শো পেয়েছে অপরাজিত। তাহলে সরকার এক জায়গায় কাঠিবাজি করল আরেক জায়গায় করল না কেন, এটা নিয়েও ভাবতে হবে..
আর অপরাজিত বিভিন্ন হলে কম শো পেয়েছে, তার একটা কারণ কিন্তু কিশমিশ আর রাবণ এখনও হাউসফুল যাচ্ছে। তবে অপরাজিত মানুষ দেখছে, তাই এর শো-ও কিন্তু দিন দিন বাড়ছে….

 

 

যাক ওসব কথা। কেমন হয়েছে অপরাজিত ফিল্মটি?
সত্যজিৎ রায় মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরীর কর্ণধার অভীক জ্যোতি বিশ্বাস লিখছেন, “স্বয়ং সত্যজিতের মুখ থেকে শুনতে শুরু করলাম সেই সমস্ত কালজয়ী ঘটনা প্রবাহ যা প্রতি মুহূর্তে হয়ে উঠল জীবন্ত। কাকে দেখানো হয়নি সিনেমায় ! কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শ্রীমতী সুপ্রভা রায়, শ্রীমতী বিজয়া রায়, শ্রী সন্দীপ রায়, বিধানবাবু, নেহেরুজি, পণ্ডিত রবি শংকর ও সেই সময়ের পথের পাঁচালীর টিম সত্যজিৎ। ইতিহাস কিভাবে ইতিহাস রচনা করে দেখে যাচ্ছিলাম”।

 

 

“আর বারবার মনকে বোঝাচ্ছিলাম যে, না না এ হল জিতু, রায় সাহেব নয়। তবু কিছুতেই মন মানছিল না। পথের পদাবলীর মধ্যে দিয়ে পথের পাঁচালী পুনঃনির্মাণ গায়ে কাঁটা জগচ্ছিল। চোখ ভিজে যাচ্ছিল বারবার। কল্পনা, বাস্তব সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছিল আর সারা পর্দায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল সেই ৬ ফুট ৪ ইঞ্চির মানুষটা। আর পরতে পরতে ছিল চমক”।

 

 

সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিনে ‘কেন্দ্রীয় তথ্য এবং সম্প্রচার মন্ত্রক’ -এর পক্ষ থেকে মুম্বাই-এ অনীক দত্ত পরিচালিত ‘অপরাজিত’ ছবিটির স্পেশ্যাল স্ক্রিনিং করা হয়, যেখানে ছবিটির কিছু অংশ দেখে স্বয়ং শ্যাম বেনেগাল ছবিটির প্রশংসা করেছেন।

 

 

এই ছবিটি সেখানে এতটাই প্রশংসিত হয় এবং পছন্দ হয় যে, সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিনে তাঁকে স্মরণ করে ‘ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ ইন্ডিয়ান সিনেমা’ তিনদিনব্যাপী যে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করেছিল এবং যেখানে অংশীদার ছিল ‘ন্যাশনাল ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন অফ ইন্ডিয়া’-এর মত সংস্থা। সেই ফেস্টিভ্যালে প্রথম শো তথা উদ্বোধনী শো ছিল অনীক দত্ত পরিচালিত এই ‘অপরাজিত’ ছবিটি (২রা মে, সকাল ১১টা)।

 

 

ছবিটি মুক্তির আগেই ডাক পেয়েছে ‘লন্ডন ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর ইউকে প্রিমিয়ারে এবং ‘টরন্টো ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এ প্রদর্শনের জন্য। কে না জানে, সেই রবীন্দ্রনাথের আমল থেকেই, বিদেশে ডাক না পেলে দেশে সম্মান পাওয়া যায় না..সেই বিদেশি ডাক ইতিমধ্যেই পেয়েছে অপরাজিত..
যে ছবিটি নিয়ে বাঙালি দর্শকদের মধ্যে বহুদিন আগে থেকে আলোচনা তুঙ্গে, জিতু কামালের মুখে সত্যজিৎ রায়ের হুবহু প্রতিচ্ছবি এবং ছবিটির টিজার ও ট্রেলার দর্শকদের মন জয় করে নিয়ে অলরেডি বসে ছিল। যা নিয়ে ছবি রিলিজের আগেই বাজি ধরে বলা যেতে পারত যে, বাঙালি দর্শক এই ছবিটি থিয়েটারে গিয়ে দেখবেন। আর সেটাই হচ্ছে, মানুষ দেখছেন। নন্দনে না চললে, হল না পেলেও কিস্যু যায় আসে না…মানিকদা একাই একশো…আজও….

 

আরও পড়ুনঃ মালদায় কি কাশ্মীর ফাইলস?

 

 

ও হ্যাঁ, নন্দন নামটি সত্যজিতের দেওয়া, লোগো ডিজাইন সত্যজিতের এমনকি দ্বারোদঘাটন করেছিলেন স্বয়ং সত্যজিৎ রায়। না, তাঁর কোন অনুপ্রেরণা লাগেনি। শুধু প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। সেই নন্দনে সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে বানানো ছবি প্রদর্শনের অনুমতি পায় নি…তবে এযুগে আশ্চর্যের আর কিছুই নেই…

Related Articles