কলকাতা, ২৯ জানুয়ারিঃ শুক্রবার বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর ২৪ ঘণ্টাও অপেক্ষা করলেন না রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্ধ্যা গড়ানোর আগেই তৃণমূলের সদস্যপদ ছাড়লেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইতিমধ্যেই নিজের পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি।পদত্যাগপত্রের একটি কপি পাঠিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকেও। চিঠি পৌঁছে গিয়েছে তৃণমূল ভবনেও। তাতে তিনি জানিয়েছেন, নিজের সদস্যপদের পাশাপাশি দলের সমস্ত দায়িত্বও ছাড়লেন তিনি। এই মুহূর্ত থেকে দলের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করলেন বলেও চিঠিতে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন রাজীব। তার আগে সকালে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্ত্রিত্ব আগেই ছেড়েছিলেন। অমিত শাহের রাজ্য সফরের আগেই রাজীবের তৃণমূলের সংস্রব ত্যাগে রাজ্য রাজনীতিতে জোর জল্পনা। রবিবার ৩১ জানুয়ারি হাওড়ার ডুমুরজলায় অমিত শাহের জনসভায় মহাযোগদানের আসর বসতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ঘটনাপ্রবাহ সেটাই নিশ্চিত করছে। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রবীর ঘোষাল, বৈশালী ডালমিয়া তালকাটা ক্রমশঃ দীর্ঘ ও আকর্ষণীয় হচ্ছে। লাইনে রয়েছেন হাওড়ার প্রাক্তন মেয়র চিকিৎসক ডাঃ রথীন চক্রবর্তী, হাওড়া যুব তৃণমূল সভাপতি অনুপম ঘোষ ও আরও অনেকে। অমিত শাহের উপস্থিতিতে রবিবার ডুমুরজলার জনসভায় গেরুয়া শিবিরে নাম লেখাতে পারেন এঁদের অনেকেই। অমিত শাহ বঙ্গ-সফরে আসার আগেই হাওড়া জেলা-তৃণমূলে ভাঙন। কার্যত জেলায় একা হয়ে গেলেন অরূপ রায়। জেলা তৃণমূল সভাপতির ঘনিষ্ঠ অনেকেই নাকি তলে তলে রাজীবের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, অরূপ রায়কে রাজনীতিগত ভাবে কোণঠাসা করার চেষ্টা থাকবে সদ্য তৃণমূলত্যাগী রাজীবের। এদিকে বিজেপি নেতা মুকুল রায়, অর্জুন সিংদের চাঞ্চল্যকর দাবি, রবিবার অমিত শাহের সভায় তৃণমূল সাফ হয়ে যাবে।
রাজীবকে নিয়ে এদিন দিনভর চলল চর্চা। শুক্রবার সকালেই বিধানসভায় পৌঁছন তিনি। স্পিকারের সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছেন বলে প্রথমে জানান। পরে জানা যায়, স্পিকারের সামনে বসেই পদত্যাগপত্র লেখেন তিনি। খুব শীঘ্র তিনি তৃণমূলের সদস্যপদও ছাড়তে পারেন বলে জল্পনা তুঙ্গে। তবে এ দিন বিধানসভা থেকে বেরিয়ে আসার সময়ও রাজীবের হাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ছিল। রাজীব জানান, ‘দলনেত্রী আমার কাছে মায়ের মতো। আগেও মাথার পিছনে ওঁর ছবি থাকত। আগামী দিনেও ছবি কাছে রাখব।’
ইস্তফা দেওয়ার পর এদিন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে রাজীব বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। অধ্যক্ষ মহাশয়ের হাতে ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছি। তাঁর কিছু প্রশ্ন ছিল। আমি উত্তর দিচ্ছিলাম। তিনি বলেছেন সবটাই আইন অনুযায়ী পরীক্ষা করে দেখবেন। তার পর সিদ্ধান্ত জানাবেন। আনুষ্ঠানিক ভাবে পদত্যাগপত্র তুলে দিয়েছি ওঁর হাতে। কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি। কারণ দীর্ঘ ১০ বছর ওঁর সহযোগিতা পেয়েছি। একই সঙ্গে বিধানসভার সহকর্মী এবং বাংলার মানুষকে ধন্যবাদ জানাই। ১০ বছর ধরে সকলের ভালবাসা পেয়েছি। কৃতজ্ঞতা জানাই দলনেত্রীকে। বিধায়ক হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন উনি। ওঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকব। ডোমজুড়ের শিশু থেকে বৃদ্ধ, যাঁদের ভালবাসা পেয়েছি, বিগত ১০ বছর ধরে যাঁদের জন্য কাজ করেছি, তাঁদের সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাই। কথা দিচ্ছি, আগামী দিনেও ডোমজুড় বিধানসভা কেন্দ্রে মানুষের পাশে থাকব। মানুষের স্বার্থে, উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করে যাব।’
তবে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিলেও এখনও পর্যন্ত তৃণমূলের সদস্যপদ ছাড়েননি রাজীব। সে নিয়ে প্রশ্ন করলে বলেন, ‘এখনও দলের সদস্য আমি। একটা মানসিক প্রস্তুতির দরকার ছিল। মন্ত্রিসভা ত্যাগের পরেও ৭ দিন অপেক্ষা করেছিলাম। সংসদীয় গণতন্ত্রে রাজনীতির কাজ করতে গেলে কোনও না কোনও দলের অংশ হতে হয়। নির্দল হয়ে সেইভাবে মানুষের জন্য কাজ করা যায় না। শেষ পর্যন্ত কী করব, আগামীকাল সিদ্ধান্ত জানাব আপনাদের।’
ঠিক এক সপ্তাহ আগে বনমন্ত্রীর পদ থেকে রাজীবের ইস্তফা পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে জল্পনা চলছিল। তিনি গেরুয়া শিবিরে যোগ দিতে যাবেন কি না, সে দিকে তাকিয়ে ছিল রাজ্যের রাজনৈতিক মহল। এতদিন এই নিয়ে মুখ না খুললেও, অমিত শাহের বঙ্গ সফরের কয়েক ঘণ্টা আগে রাজীবের এই সিদ্ধান্তে ফের সেই জল্পনা জোরদার হল। শোনা যাচ্ছে রবিবার শাহের উপস্থিতিতে ডুমুরজলায় গেরুয়া শিবিরে নাম লেখাতে পারেন রাজীব।