কলকাতা, ২২ জানুয়ারি: জল্পনা প্রায় শেষ। মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। দল বদলানোর শুরুর ছবিটা একই ছিল শুভেন্দু অধিকারীর। এভাবেই শুরুতে রাজ্যের মন্ত্রিপদ ছেড়ে দিয়েছিলেন শুভেন্দু। বাকিটা তো এখন সবারই জানা।
শুভেন্দুর পর রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়েও ছিল একই জল্পনা। বারবার সুর কেটেছে রাজ্যের এই মন্ত্রীর। শুক্রবার সেসব জল্পনায় আরও খানিকটা উস্কানি। শুভেন্দু অধিকারী, লক্ষ্মীরতন শুক্লার পর তৃতীয় বিধায়ক-মন্ত্রী যিনি মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিয়ে ভোটের আগে শাসক শিবিরে বড় ধাক্কা দিলেন। ফেসবুকে পোস্ট করলেন পদত্যাগের চিঠি। বনমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফাপত্র নিজে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে দিয়ে এসেছেন। দুপুরে রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের হাতেও পদত্যাগপত্র তুলে দিয়েছেন।
বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রিত্ব সামলেছেন। বর্তমানে রাজ্যের বনমন্ত্রী ছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালকে দেওয়া পদত্যাগের চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘রাজ্যের মানুষকে সেবা করার জন্য আমি গর্বিত। এরকম একটা সুযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।’ পদত্যাগ গ্রহণ করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন তিনি। পদত্যাগের পর এবার রাজীবের তৃণমূল ছাড়াটা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। তৃণমূলের তরফে সাংসদ সৌগত রায় বললেন, ‘এটাই প্রত্যাশিত করেছিলাম আমরা। অনেক দিন ধরেই মন্ত্রিসভার বৈঠকে আসছিলেন না। ওর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ছিল। দলে থেকেও কোনও কাজ করছিলেন না।’
রাজীবের পদত্যাগ কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা নয়। ঠিক দু’দিন আগেই নাম না করে রাজীবকে বিজেপিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন শুভেন্দু। বলেছিলেন, সবার জন্যে বিজেপির দরজা খোলা রয়েছে। সভা থেকে সমস্ত বেসুরো তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশ্যে শুভেন্দু বলেন, তৃণমূল পাইভেট কোম্পানিতে থাকতে হলে কর্মচারী হয়েই থেকে যেতে হবে। তবে সহযোদ্ধা কিংবা সহকর্মী হিসাবে যদি থাকতে চান তাহলে অবশ্যই বিজেপিতে আসুন। তবে রাজীব কিংবা প্রবীর ঘোষালরা বিজেপিতে যোগ দেবেন কিনা সেই বিষয়ে কিছু স্পষ্ট ভাবে জানাননি নন্দীগ্রামের প্রাক্তন এই বিধায়ক। গত শনিবার ফেসবুকে লাইভ বার্তায় ঠারেঠোরে নিজের অসন্তোষের কথা ব্যক্ত করেন ডোমজুড়ের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। খানিকটা হলেও সাধারণ মানুষের পাশ থেকে সরে গিয়েছে দল। ভুল স্বীকার না করলে মানুষের পাশে থাকা যায় না। অভিমানের সুরে রাজীব বলেন, ‘অনেক সময়েই ভালো কাজ করতে চেয়ে করতে পারিনি যখন, তখন আহত হয়েছি। ক্ষোভও জমেছে। সেই ক্ষোভ আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছি।’ তাঁর কথায়, ‘দলের কর্মীরা শুধু সম্মান চায়। কেউ বলতে পারবেন না দলের কর্মীরা আমার থেকে অসম্মান পেয়েছে। আমার দলনেত্রীও এই একই কথা বলেন। কিন্তু কখনও দেখা যায় সেই কথা রাখা হয় না। কাজ করতে গিয়ে বাধা পেয়ে মুখ খুলেছি, সেটাকে অন্যায় মনে করি না।’
শুভেন্দু অধিকারীর পরামর্শ প্রসঙ্গে রাজীবকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ‘কে কি বলেছে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার, আমি কি করবো সেটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। গণতন্ত্রে মানুষ শেষ কথা। মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই।’