চিত্তরঞ্জন খাঁড়া
ইনভেস্টর বনাম ক্লাব টানাপোড়েনে সরগরম মহমেডান স্পোর্টিং। ইনভেস্টর বাংকারহিলের সঙ্গে মৌ-চুক্তি হলেও আসল চুক্তি হয়নি। ইনভেস্টরের চুক্তিতে সই না করে ঝুলিয়ে রেখেছেন মহমেডান কর্তারা। আসলে ক্লাবের সিনিয়র কর্তাদের আপত্তিতেই মৌ-চুক্তির তিন মাস পরেও মূল চুক্তিপত্রে সই সম্পন্ন হয়নি। ক্লাবের দুই সিনিয়র কর্তা কলকাতা টুডে-কে বললেন, ‘বাংকারহিলের সঙ্গে যে মৌ-চুক্তি হয়েছিল তাতে একরকম শর্ত ছিল। আসল চুক্তিতে অন্যরকম শর্ত। আমরা আপাতত পাঁচ বছরের চুক্তি করতে চাইছি। ওরা চাইছে ২০ বছরের। এটা কী করে সম্ভব? প্রথমে এককালীন কিছু টাকা (২ কোটি) দেওয়ার পর প্রতি বছর ২৫ শতাংশ করে বাড়ানোর কথা আমরা বলেছি। বাংকারহিল প্রতি বছর কত টাকা করে ফান্ড বাড়াবে সেটা চুক্তিতে উল্লেখ নেই। সেটা তো জানাতে হবে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার ইনভেস্টর ১২৮ বছরের ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের জার্সির রং বদলে দিতে চাইছে। পারলে লোগোও বদলে দেবে। ওরা মহমেডান ক্লাবের লোগো ফুটবলের বাইরে ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করতে চাইছে। এইসব আমরা করতে দেব না। আমরা শুধু সিনিয়র ফুটবলটা ইনভেস্টরের হাতে দিয়েছি। ওরা ক্রিকেট, ইউথ ডেভেলপমেন্ট, অ্যাকাডেমি সব নিচ্ছে বলে মূল চুক্তিপত্রে উল্লেখ করেছে। ২ কোটির মধ্যে এক-দেড় কোটি তো জুনিয়র, ইউথ ডেভেলপমেন্টেই খরচ হয়ে যাবে! মহমেডান ক্লাবকে কখনও মদ বা মাদকজাতীয় পণ্য প্রস্তুতকারী সংস্থা স্পনসর করেনি। এটাও চুক্তিতে উল্লেখ করা উচিত। আমরা বলার পরেও এটা করেনি।’ বোঝাই যাচ্ছে ক্লাবের কর্মসমিতিতে কিছু সিনিয়র কর্তাদের দাপটে কোণঠাসা সচিব ওয়াসিম আক্রম, ফুটবল সচিব দীপেন্দু বিশ্বাস, অর্থসচিব শারিক আহমেদের মতো তরুণ কর্তারা।
ডামাডোলের মধ্যে মঙ্গলবার ইনভেস্টর বাংকারহিলের কর্তাদের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনায় বসার কথা ছিল ক্লাবকর্তাদের। কিন্তু ইনভেস্টর কর্তারা স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, আগে ক্লাব ইতিবাচক পদক্ষেপ নিক। তারপর কথা। ইনভেস্টর বাংকারহিলের অন্যতম ডিরেক্টর দীপক সিং ‘কলকাতা টুডে’-র এই প্রতিবেদককে বললেন, ‘ক্লাব কর্তারা গত তিন মাস ধরে চুক্তিতে সই না করে ঘোরাচ্ছে। এখন আমাদের বদনাম করার চেষ্টা করছে। চুক্তিতে কোথাও বলা নেই আমরা ক্লাবের জার্সি, লোগো বদলে ফেলব। সব মিথ্যা প্রচার। ওরা ২০ বছরের চুক্তিতে রাজি হয়েছিল। এখন বলছে অন্য কথা। মিডিয়াতে বলছে। অথচ আমাদের সঙ্গে কথা বলছে না। মৌ-চুক্তির সময় সব শর্তে রাজি ছিল। এখন নানা মত, শর্ত আরোপ। ওরা এতদিন পর বলছে ড্রাফট চুক্তি বানিয়ে আলোচনায় বসবে। ক্লাব ড্রাফট বানিয়ে আগে আমাদের পাঠাক, তারপর একসঙ্গে বসে আলোচনার ব্যাপার। আর চুক্তিতে কোনও বিচ্যুতি বা বদলে আমরা সায় দেব না।’
অর্থাৎ দু’পক্ষের শর্তাবলী সম্বলিত ড্রাফট নিয়ে মঙ্গলবার মহমেডান ক্লাব ও ইনভেস্টর কোনও বৈঠক হচ্ছে না। হলে বুধবার হতে পারে। কিন্তু তাও অনিশ্চিত। ক্লাবের কর্মসমিতির সিনিয়র সদস্য প্রাক্তন মহমেডান সচিব মহম্মদ কামারুদ্দিন বললেন, ‘মঙ্গলবার আমাদের আইনজীবী ড্রাফট তৈরি করবে। বুধবার ইনভেস্টরের কাছে সেটা পাঠিয়ে দেব।’ দু’পক্ষের যে অনড় অবস্থান তাতে সমাধানসূত্র বেরিয়ে চুক্তি সম্পন্ন হওয়াটা বেশ কঠিনই মনে হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ইনভেস্টরের তরফে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে মূল চুক্তিপত্রে সই করার জন্য। ৯ জানুয়ারি আই লিগের উদ্বোধনী ম্যাচেই মাঠে নামছে মহমেডান স্পোর্টিং। তার আগে সাত বছর পর আই লিগে প্রত্যাবর্তনের মুহূর্তে ইনভেস্টর হারাতে হবে না তো ময়দানের অন্যতম প্রধানকে? আই লিগে অভিযান শুরুর আগে মাঠের বাইরে বেশ বিপাকে সাদা-কালো শিবির।