কলকাতা, ২৫ জানুয়ারিঃ দেবলীনা-সায়নীদের ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছে ওরা। ফেসবুকের মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। রাস্তায় বের হলেই নাকি ধর্ষণের হুমকি। একটা করে দেখা…একেবারে আক্রমণাত্বক মেজাজে বিজেপিকে তুলোধোনা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আজ সোমবার হুগলির পুরশুড়ায় সভা করতে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনের সভার শুরু থেকে আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তাঁর আক্রমণের নিশানায় ছিল বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, রক্ত দিয়ে কাজ করব, বহিরাগত বিজেপিকে ঢুকতে দেব না। জেলে থাকব, বিজেপির ঘরে থাকতে রাজি নই। মুখ্যমন্ত্রীর হুঙ্কার, ‘আমি মাথা নত করব! না, আমি বিজেপির কাছে মাথা নত করব না। তার চেয়ে বরং নিজের মাথা কেটে ফেলব। একমাত্র জনগণের সামনেই মাথা নত করব।’ তবে বিজেপিকে তিনি যে কোনওমতেই মেনে নিতে নারাজ, এদিন সভা মঞ্চ থেকে স্পষ্ট বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী।
শুধু তাই নয়, বিজেপি সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে প্রচুর টাকা ছড়াচ্ছে বলেও এদিন অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ফেক ভিডিও ছড়াচ্ছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এমনকি আমার নাম করেও বিজেপি অনেক কিছু রটাতে পারে! সাধারণ মানুষকে সে সমস্ত জিনিস বিশ্বাস না করার পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই অভিনেত্রী সায়নী এবং দেবলীনার প্রসঙ্গ তুলে আনেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘সায়নী, দেবলীনাকে ফেসবুকে হুমকি দিয়ে বিজেপি বলছে, তোরা বাংলার বাইরে যাবি না, গেলে তোদের রেপ করে দেব। আমি বললাম এত সাহস! একটা করে দেখা…। তারপর দেখবি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী? পশ্চিমবঙ্গ কী? এরা সংস্কৃতি জানে না। আবার বাংলা দখলের কথা বলছে।’
উল্লেখ্য, গোমাংস খাওয়া নিয়ে একটি চ্যাট শোয়ে মতামত দেওয়ায় অভিনেত্রী দেবলীনা দত্তকে খুন আর গণধর্ষণের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বাদ পড়েনি তাঁর মা। তাঁকে নিয়েও চলছে ন্যাক্কারজনক মন্তব্য। ঘটনার সুত্র একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের চ্যাট শো। শুধু দেবলীনাই নন, কয়েকদিন আগে একটি অনুষ্ঠানে বাংলার সংস্কৃতি নিয়ে মন্তব্য করেন অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ। তারপর ২০১৫ সালে তাঁর টুইটার হ্যান্ডেল থেকে করা একটি টুইট নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। ওই টুইটের মাধ্যমে হিন্দু ধর্মকে অপমান করা হয়েছে বলে দাবি করেন মেঘালয়ের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা বিজেপি নেতা তথাগত রায় । সায়নীর বিরুদ্ধে রবীন্দ্র সরোবর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।
এদিনের জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানান, সংস্কৃতিকে, টালিগঞ্জকে এবং বাংলাকে আক্রমণ করা যাবে না। বাক স্বাধীনতা আছে, মানুষ কথা বলতেই পারেন। তিনি বলেন, ‘সায়নীর মতো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একটা বাচ্চা মেয়েকে ধমক-চমক দিচ্ছে। আজ সকালেও শুনেছি, যে ওঁকে নাকি বিজেপি থেকে ধমকানো হচ্ছে। এত বড় স্পর্ধা? বিজেপি তুমি দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, বিহারে ধমকাও। বাংলার কাউকে ধমকানোর সাহস পাও কোথা থেকে বাংলায় ধমকালে মুখ লিউকোপ্লাস্টার দিয়ে বন্ধ করে দেবে মানুষ। এত সোজা নয়। ক্ষমতা থাকে তো সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষদের গায়ে হাত দিয়ে দেখাও। বয়স হলেও ভীমরতি যায় না। নাতনির বয়সি মেয়েকে প্রতিদিন হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তাঁর স্বাধীনভাবে ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশের অধিকার নিশ্চয়ই আছে।’ এদিন দলবদলুদের উদ্দেশেও বার্তা দিয়েছেন মুখমন্ত্রী। পুরশুড়ার সভামঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘যাঁরা যাবেন চলে যান। ট্রেন ছেড়ে দেবে। ল্যাজ গুটিয়ে পালন। পায়ে গিয়ে পড়ুন।’ এদিন পুরশুড়ার জনসভা থেকে জেলার মানুষের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, হুগলির সবকটি আসন আপনারা আমাকে দিন। ভুলত্রুটি থাকলে শুধরে নেব।