কলকাতা, ২৮ ফেব্রুয়ারি: সত্যিই নজিরবিহীন ব্রিগেড সমাবেশ। রবিবার গরমও পড়েছে যথেষ্ট। সঙ্গে রোদের তেজও বেশি। সেই তেজের মধ্যেই রবিবার দুপুরে যত দূর চোখ যায়, ব্রিগেড ময়দানের তত দূরই লাল নিশান আর মাথা। বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাম-কংগ্রেস জোটের ব্রিগেড সমাবেশে এবার নতুন সঙ্গী ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ। ফলে তাঁদের সমর্থকও প্রচুর। বঙ্গের ভোটে সদ্যগঠিত দলের জনপ্রিয়তা যে কতটা, তা বোঝা গেল এই সমাবেশেই।
ব্রিগেডের মঞ্চে যখন আইএসএফ প্রধান আব্বাস সিদ্দিকি এলেন, তখন গোটা ব্রিগেড ময়দানে সমর্থনের ঢেউ উঠল। মঞ্চে তখন বক্তৃতা থামিয়ে দিলেন কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী। যা কার্যত অস্বস্তি বাড়াল কংগ্রেসের। এরপর ব্রিগেডের সভাকে যেভাবে নিজের নিজের দখলে নিয়ে নিলেন তাতে একটা ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে গেল, বঙ্গ রাজনীতি নতুন নায়ক পেয়ে গিয়েছে। এদিনের ব্রিগেডের দখল নিল তরুণ প্রজন্ম। আর তাদের নায়ক নতুন তারকা আব্বাস সিদ্দিকি। যে কারণে এদিনের ব্রিগেড এক অর্থে ঐতিহাসিক ব্রিগেড। এদিনের ব্রিগেড কার্যত ভরিয়েছেন আব্বাস সমর্থকরা। তাই ব্রিগেডের মঞ্চে দাঁড়িয়ে আইএসএফ প্রধান বললেন, ‘আর এক সপ্তাহ আগে যদি জোটের ঘোষণা হত তাহলে দ্বিগুণ লোক আনতাম ব্রিগেডে।
এদিন ব্রিগেডের মঞ্চে যখন ভাষণ দিতে উঠলেন যেন ঝড় উঠল বিপুল ইন্ডিয়ান সেকুলার সমর্থকদের মধ্যে। উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন আব্বাস সমর্থকরা। এরপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে আব্বাস সিদ্দিকি সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানালেন। মমতার তৃণমূলকে বিজেপির ‘বি’ টিম বলে তোপ দাগেন আব্বাস। কার্যত হুঁশিয়ারির সুরেই তিনি বললেন, ‘নারীদের স্বাধীনতা হরণ করে নিয়েছে মমতা। আমরা স্বাধীনতা ফেরানোর যুদ্ধে নেমেছি। রক্ত দিয়ে মাতৃভূমিকে রক্ষা করব। মমতাকে জিরো করে দেব।’ আব্বাসের হুঙ্কার, ‘এই ব্রিগেডের মাটি থেকে আমার প্রত্যেকটা বাঙালি, ভালবাসার মানুষকে বলব, যেখানে যেখানে বাম শরিক দল প্রার্থী দেবে, পুরোনো ইতিহাস ভুলে আগামী নির্বাচনে মাতৃভূমিকে রক্ত দিয়ে হলেও স্বাধীনতা দেব। আমি আবার বলছি, যেখানে যেখানে বাম শরিক দল প্রার্থী দেবে দুর্দিনের ইতিহাস ভুলে গিয়ে আগামী দিনে এই বিজেপি সরকার ও তাদের ‘বি’ টিম মমতাকে আমরা বাংলা থেকে উৎখাত করে ছাড়ব। সবাই এই মমতার আমলে বিপদে আছে। ওদের দাদাগিরিতে কেউ কথা বলতে পারে না। একমাত্র এই বাঘের বাচ্চারা কথা বলে। চ্যালেঞ্জ দিয়ে গেলাম, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মমতাকে জিরো করে দেখিয়ে দেব।’
পাশাপাশি বিজেপিকে আক্রমণ করতে গিয়ে অবশ্য তিনি বামেদের স্লোগানই খানিকটা ধার করলেন। স্লোগান তুললেন, ‘বিজেপির কালো হাত ভেঙে দেব।’ একুশে ভোটের আগে বাম-কংগ্রেসের ব্রিগেড সমাবেশের অন্যতম চমক ছিল ধর্মনিরপেক্ষ জোটে আইএসএফের যোগদান। চমক দেখাও গেল রবিবার দুপুরে।