কাঁথি, ৬ ফেব্রুয়ারি: সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর পাড়ায় দাঁড়িয়ে তাঁকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ক্ষমতা থাকলে নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ান৷ ৫০ হাজার ভোটে হারাব৷ শুভেন্দু এবং তাঁর পরিবারের নাম না করে ‘মিরজাফর অ্যান্ড কোম্পানি’-কে মেদিনীপুর থেকে বিতাড়িত করারও আহ্বান জানান অভিষেক।
রীতিমতো বল্গাহীন ভাষায় শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করে ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ বললেন, ‘আমি কাঁথিতে সভা করতে আসছি বলে একজন আবার ফেসবুক পোস্ট করে ভয় দেখাচ্ছে। আরে তোর বাপকে গিয়ে বল, তার বাড়ির পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। কী করবি কর! হিম্মত আছে? চার আনার নকুল দানা, তার আবার ক্যাশমেমো!’ কয়েকদিন আগে তমলুকের সভায় শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, ‘আমি ওর থেকে ১৮ বছরের বড়। আমাকে তুই-তোকারি করছে। ভাষা শুনেছেন!’ এদিন শুভেন্দুর গড়ে দাঁড়িয়ে অভিষেকের জবাব, ‘আবার বলছে আমার থেকে ১৮ বছরের বড়, আমি কেন ওকে তুই-তোকারি করছি। আমি কাউকে তুই-তোকারি করি না। কিন্তু বেইমানদের তুই তোকারিই করব!’
শুভেন্দু অধিকারী বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার প্রায় দেড় মাস পর তাঁর ‘গড়’ কাঁথিতে সভা করতে এলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার দইসাইয়ের জনসভায় দাঁড়িয়ে শুভেন্দুকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে অভিষেক বলেন, মেদিনীপুরের যেকোনও জায়গা থেকে দাঁড়ালেই ‘মীরজাফর’ জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। ক্ষমতায় আসার তিন মাসের মধ্যে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া করার হুঁশিয়ারিও দেন অভিষেক৷ বলেন, ‘মেদিনীপুর থেকে ১৬টা আসনে জেতান। কথা দিচ্ছি, সরকার গড়ার ৩ মাসের মধ্যে রাজনৈতিকভাবে ওদের দেউলিয়া করে দেব।’ শুভেন্দু অধিকারীকে চ্যালেঞ্জ তিনি জানিয়ে বলেন, বাবাকে গিয়ে বল, কাঁথির শান্তিকুঞ্জ থেকে ৫ কিমির মধ্যে দাঁড়িয়ে চ্যালেঞ্জ নিচ্ছি। আগামী দুমাসের মধ্যে ৫০ বার মেদিনীপুরে আমি আসব।
শুভেন্দু অধিকারীর খাসতালুক নন্দীগ্রাম থেকে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই মমতার ডেরা দক্ষিণ কলকাতার একটি জনসভা থেকে শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, ৫০ হাজার ভোটে মুখ্যমন্ত্রীকে হারাব। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এদিন তারই জবাব দিলেন অভিষেক৷ প্রায় ৬ বছর পরে ফের পূর্ব মেদিনীপুরে কোনও কর্মসূচিতে যোগ দিলেন ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ।কাঁথিতে অধিকারী পরিবারের বাসভবন ‘শান্তিকুঞ্জ’র নাম এসেছে অভিষেকের বক্তৃতায়। জনতার উদ্দেশে তাঁর আবেদন, ‘জোরে আওয়াজ তুলুন। পাঁচ কিলোমিটার দূরেই তো শান্তুকুঞ্জ। সেটা যেন থরথর করে কাঁপে।’
শুভেন্দুর ‘তোলাবাজ ভাইপো’ জবাবে সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের চিঠির প্রসঙ্গ তুলেছেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘কাদের জন্য সুদীপ্ত সেন সর্বস্বান্ত হলেন, তা নিজেই লিখেছেন।’ অভিষেক আরও বলেন, ‘মেদিনীপুরের মাটিকে কলুষিত করে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন উনি।’ কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার প্রসঙ্গ টেনে শুভেন্দুর উদ্দেশে কটাক্ষ করে ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ বলেছেন, ‘সে দিন যে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছিল, এখন তার পায়ে হাত দিয়েই প্রণাম করছে।’ নাম না করে এখানে অমিত শাহকেও একহাত নিয়েছেন অভিষেক।