কলকাতা টুডে ব্যুরো:এক স্বর্ণযুগের অবসান। প্রয়াত হয়েছেন কিংবদন্তি তরুণ মজুমদার। এদিন তার মৃত্যুর খবরে শিল্পী জগতে শোকের ছায়া ভেসে ওঠে। গণমাধ্যমে শিল্পীরা তরুণ মজুমদারের স্মৃতিগুলো তুলে ধরেন। এদিন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন ‘ শেষ মানুষ যাঁকে নিজে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গুরু মানি, তিনি তরুণ মজুমদার। ‘ বললেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। ৭ বছর বয়সে তাঁর সঙ্গে প্রথম ছবি করেন প্রসেনজিৎ। ‘ তাঁর কাজ থেকে যাবে, যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন ‘ ।
‘বাংলা সিনেমা যতদিন থাকবে, ততদিন পরিচালক তরুণ মজুমদারকে মনে রাখবে মানুষ ‘ শোকজ্ঞাপন অভিনেতা আবির চট্টোপাধ্যায়ের।
‘জীবনের শেষ সফর সুন্দর হোক, কিংবদন্তি’’- সামাজিক মাধ্যমে এ ভাষাতেই প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদারকে শ্রদ্ধা জানালেন সৃজিত মুখোপাধ্যায় ৷ তিনি লিখেছেন সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন এবং তপন সিনহার যে কিংবদন্তিসম নক্ষত্রপুঞ্জ ছিল, তার শেষ নাম আজ আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন ৷ তাঁর ছবির নৈপুণ্যে বক্স অফিসের সাফল্যের পরশপাথরের রহস্যভেদ হয়েছিল ৷ লিখেছেন সৃজিত ৷
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর বলেন, ‘ওঁর সঙ্গে কাজের বহু স্মৃতি রয়েছে। তরুণ মজুমদারের সঙ্গে আমার প্রথম ছবি আলো। যা বাংলা সিনেমার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। নিঃসন্দেহে একটা ল্যান্ডমার্ক ছবি। তরুণবাবু বাংলা সিনেমার স্তম্ভ। ওঁর চাঁদের বাড়ি ছবিটিতেও অভিনয় করেছি। বাংলা সিনে ইন্ডাস্ট্রিকে সমৃদ্ধ করতে ওঁর অবদান অপরিসীম। তরুণবাবুর চলে যাওয়ার খবরে মনটা খুব অস্থির হয়ে আছে।’
শতাব্দী রায় বললেন, “তরণ মজুমদার এমন একজন মানুষ, যাঁর সঙ্গে শুধু কাজ করার অভিজ্ঞতা নয়, গল্প করার অভিজ্ঞতাও দারুণ। আমি যখন এনটিওয়ান স্টুডিওতে শুটিং করতাম, কাজের অবসরে খালি ওঁর সঙ্গে গল্প করার সুযোগ খুঁজতাম। মুখিয়ে থাকতাম, কথা বলার জন্য। তখন ওঁর অফিসও ছিল ওই স্টুডিওতেই। কী দারুণ সেন্স অফ হিউমর মানুষটার। পুরনো দিনের কত গল্প করতেন। শিক্ষকরা যেমন ছাত্রদের প্রতি কড়া ছিলেন, উনিও তেমনি আমাদের কাছে অভিভাবকের মতো ছিলেন। কোনও ভুল হলে সঙ্গে সঙ্গে ধরিয়ে দিতেন। এত মিষ্টি প্রেমের ছবি যে হতে পারে, সেটা তরুণ মজুমদার দেখিয়েছিলেন বাঙালি দর্শকককে। নবীন প্রজন্ম সেসব ছবি দেখেনি সম্ভবত।’
আরও পড়ুনঃ কিংবদন্তি পরিচালকের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর
সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় বললেন,’ আমার এতদিনের দীর্ঘ কেরিয়ারে তরুণ মজুমদারের সঙ্গে আমি কোনও ছবি করিনি। তবে চিনতাম মানুষটিকে। সামনাসামনি দেখা হলে কথাও হয়েছে বহুবার। একটু রাশভারী, কিন্তু একই সঙ্গে বড়ই সজ্জন একজন ব্যক্তি। কিছু দিন ধরেই শুনছিলাম তাঁর শরীর ভাল যাচ্ছে না। কিন্তু তারপর শুনলাম তিনি নাকি সুস্থও হচ্ছেন। কিন্তু এর মাঝে কী এমন হল যে একেবারে মৃত্যুসংবাদ! আমাদের তো এখন চলে যাওয়ারই পালা। তবু মৃত্যু আর কে-ই বা চায়।’
সোহম বলছেন, ‘ছোটবেলায় ওঁর সঙ্গে আমার তিনটি ছবির কথা হয়েছিল। কিন্তু একটাও আমি করে উঠতে পারিনি। কারণ সেইসময়ে উনি মার্চ মাসে শ্যুটিং করতেন। আর আমার বার্ষিক পরীক্ষা চলত। চতুর্থ ছবির জন্যও ডাক পেয়েছিলাম কিন্তু করা হয়ে ওঠেনি সেটাও। কারণ সেসময় সত্যজিৎ রায়ের ‘শাখাপ্রশাখা’-র শ্যুটিং হওয়ার কথা ছিল। বাবা-মা বুঝতে পারছিলেন না, কোন ছবিতে আমার অভিনয় করা উচিত। এই কথা যখন তরুণ মজুমদারের কানে গিয়ে পৌঁছয়, উনি বলেন ও মানিকদার ছবিটাই করুক, ওকে আমি আবার ডাকব। সেদিনই উনি প্রমাণ করে দিয়েছিলেন, কত বড় মানুষ উনি।’