বিলকিস বানো মামলা
বিলকিস বানো মামলায় সুপ্রিম কোর্টে তৈরি হল জল্পনা! ধর্ষকদের শাস্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু, তার আগেই ধর্ষকদের মুক্তির যে সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাত সরকার, তা খারিজ করে দিল শীর্ষ আদালত।
অর্থাৎ, মুক্তি পাওয়া ওই ১১ জন ধর্ষককে আবার ফেরত যেতে হবে জেলে। জানানো হল, এই মামলার শুনানি চলবে।
সোমবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ১১ জন ধর্ষককে মুক্তির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল গুজরাত সরকার, তা এক্তিয়ার বহির্ভূত। বিচারপতি বিভি নাগরত্ন এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভুয়ানের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে জালিয়াতি করা হয়েছিল। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনও এক্তিয়ারই ছিল না গুজরাত সরকারের। যে হেতু মামলার শুনানি মহারাষ্ট্রে হয়েছে, তাই মহারাষ্ট্র সরকারেরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা।
মুক্তির জন্য আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন ওই ধর্ষণের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীরা
২০২২ সালের ১৫ অগস্ট ৭৬তম স্বাধীনতা দিবসে বিলকিসকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাত সরকার। তার আগে, মুক্তির জন্য আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন ওই ধর্ষণের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীরা। সেই আবেদনের ভিত্তিতে গুজরাত সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিল আদালত। বিজেপি শাসিত গুজরাত সরকার ১১ অপরাধীর মুক্তির পক্ষে সওয়াল করেছিল বলে জানা যাচ্ছে। এর পরই ১১ জনকে ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায় আদালত। সুপ্রিম কোর্টের ছাড়পত্রও মেলে।
১০ জনই বিভিন্ন সময়ে প্যারোলের নিয়মভঙ্গ করেছেন বলেও অভিযোগ
সূত্রের খবর ১১ জনের মুক্তির পরেই বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল দেশ জুড়ে। কেন মেয়াদ শেষের আগে ১১ জন ধর্ষক ও খুনিকে ছাড়া হল, এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বিতর্কের মধ্যেই গুজরাত সরকারের কথায় । জেলে ওই ১১ জন ধর্ষক এবং খুনি ‘ভাল আচরণ’ করেছেন, সে কারণেই তাঁদের সাজার মেয়াদ কমানো হয়েছে। যদিও প্রতিপক্ষ দাবি করে, ওই ১১ জন বিভিন্ন সময় প্যারোলে মুক্তি পেয়ে যখন জেলের বাইরে ছিলেন, তখনও তাঁদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছিল। এঁদের মধ্যে দু’জনের বিরুদ্ধে প্যারোলে মুক্ত থাকার সময় অপরাধ মূলক কার্যকলাপের অভিযোগে এফআইআর দায়ের হয়েছিল। মোট ১০ জনই বিভিন্ন সময়ে প্যারোলের নিয়মভঙ্গ করেছেন বলেও অভিযোগ ওঠে।
প্রসঙ্গত ২০০২ সালে গোধরাকাণ্ডের পর গুজরাতে সাম্প্রদায়িক হিংসা চলাকালীন ৩ মে দাহোড় জেলার দেবগড় বারিয়া গ্রামে হামলা চালানো হয়। গ্রামের বাসিন্দা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিসকে গণধর্ষণ করা হয়। বিলকিসের চোখের সামনেই তাঁর তিন বছরের মেয়েকে পাথরে আছড়ে মারেন হামলাকারীরা। ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে। তাঁর পরিবারের আরও কয়েক জন সদস্যকে হত্যা করা হয়। এই অপরাধকে ‘বিরল থেকে বিরলতম’ আখ্যা দিয়ে মুম্বইয়ের সিবিআই আদালতে কঠোর সাজার পক্ষে সওয়াল করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছিল ওই বিশেষ আদালত।