মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেই ‘বিবেচনার’ আশ্বাস
গত মে মাসে বিধানসভা ভোটে তার জয় হয় এবং মুখ্যমন্ত্রী পদে নিযুক্ত হন। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেই ‘বিবেচনার’ আশ্বাস দিয়েছিলেন। কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রবীণ কংগ্রেস নেতা সিদ্দারামাইয়ার বিশেষ ঘোষণা, পূর্বতন বিজেপি সরকারের আমলে সে রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরার উপর কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করা হল। এ প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘কে, কোথায় কী পোশাক পরবেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত পছন্দ।’’মাইসুরুতে একটি কর্মসূচিতে শুক্রবার রাতে সিদ্দারামাইয়া বলেন, ‘‘আর কোনও বাধা রইল না। এ বার হিজাব পরে যে কোনও জায়গায় যাওয়া যেতে পারে।’’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব পরার অধিকার
প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব পরার অধিকার সংক্রান্ত বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টের ‘বিচারাধীন’। ফলে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা নিয়ে রাজনৈতিক মতানৈক্যের সম্ভবনা থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, কর্নাটকের কংগ্রেস সরকার বিভিন্ন আইনি দিক খতিয়ে দেখেই পূর্বতন বিজেপি সরকারের আমলে জারি করা ওই নির্দেশিকা প্রত্যাহার করেছে।
সম্প্রতি হিজাব পড়া নিয়ে একটি বিতর্ক সৃষ্টি হয়
সম্প্রতি হিজাব পড়া নিয়ে একটি বিতর্ক সৃষ্টি হয়। উল্ল্যেখ্য কলেজ উন্নয়ন সমিতির সভাপতি তথা স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক রঘুপতি ভট্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেন, হিজাব পরিহিতরা ক্লাসে ঢুকতে পারবেন না। আর সেই বিতর্ক দ্রুত ছড়িয়ে যায় গোটা রাজ্য জুড়ে। হিজাবের পাল্টা হিসেবে গেরুয়া উত্তরীয় পরে আন্দোলন শুরু করে একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন।
২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি কর্নাটক সরকারের শিক্ষা দফতর এ বিষয়ে একটি বিশেষ কমিটি গঠন
বেশকিছু জায়গায় এই নিয়ে তৈরি হয় একাধিক বিতর্ক। কয়েকটি জায়গায় হিজাবের পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলনকারীরা মুখোমুখি হয়ে পড়েন। পুলিশের সঙ্গেও একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে দ্রুত। কয়েকটি জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সমস্ত স্কুল-কলেজ অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পর ২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি কর্নাটক সরকারের শিক্ষা দফতর এ বিষয়ে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে। আর সেখানেই ঘোষণা করা হয়, কমিটির কোনরকম সুপারিশ করার আগে পর্যন্ত ছাত্রীরা শুধুমাত্র ইউনিফর্ম পরেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে পারবেন।
২০২২-এর মার্চ মাসে কর্নাটক হাই কোর্ট মুসলিম ছাত্রীদের আবেদন খারিজ
হিজাব বা গেরুয়া উত্তরীয়— কিছুই পরার অনুমতি নেই সেখানে।এর পর ২০২২-এর মার্চ মাসে কর্নাটক হাই কোর্ট মুসলিম ছাত্রীদের আবেদন খারিজ করে জানায়, হিজাব পরা ইসলামে ‘বাধ্যতামূলক ধর্মীয় অনুশীলন’-এর মধ্যে পড়ে না। এর পর জানা যায় আবেদনকারীরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন।
শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতির বেঞ্চ স্থগিতাদেশ
কিন্তু গত অক্টোবরে বিচারপতি হেমন্ত গুপ্ত এবং বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চ ‘খণ্ডিত রায়’ দেওয়ায়, মামলাটি এখন শীর্ষ আদালতেরই উচ্চতর বেঞ্চে চলে গিয়েছে। শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতির বেঞ্চ স্থগিতাদেশ না দেওয়ায় কর্নাটকের বিজেপি সরকারের আমলে জারি করা ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ’ সংক্রান্ত নির্দেশ বহাল ছিল। আর এ বার সেই নির্দেশ প্রত্যাহার করে নিল মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার সরকার।