Home রাজনৈতিক ইস্তফা দিয়ে ক্যামেরার সামনে কেঁদে ফেললেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়

ইস্তফা দিয়ে ক্যামেরার সামনে কেঁদে ফেললেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়

by Kolkata Today

কলকাতা, ২২ জানুয়ারি: ক্ষোভ, বেদনা নিয়েই মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে হল। রাজভবনে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে বেরিয়ে এমনটাই বললেন রাজ্যের সদ্য প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু আবেগই নয়, ক্যামেরার সামনে রীতিমত কেঁদে ফেললেন রাজীব। এদিন ফেসবুকে বনমন্ত্রীর পদে পদত্যাগপত্র পোস্ট করেন তিনি। কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি গিয়ে ইস্তফাপত্র দিয়ে আসেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজে তা গ্রহণ করেন। পরে যান রাজভবনে। সেখান থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন রাজীব। কথায় উঠে আসে শুধুই ক্ষোভ আর কষ্ট। কার্যত আবেগপ্রবণ হয়ে ভেঙে পড়েন ডোমজুড়ের বিধায়ক। চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি বনমন্ত্রীর পদে সদ্য ইস্তফা দেওয়া রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, আজ নয় আসলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আড়াই বছর আগে। সেইসময় সেচ দফতরের মন্ত্রী ছিলেন রাজীব। এদিন তিনি বলেন, ‘দফতর বদল হতেই পারে, কিন্তু ন্যুনতম সম্মান আশা করেছিলাম।’ ক্ষোভের সুরে রাজীব জানিয়েছেন, গেরুয়া হাওয়ায় প্রভাবিত হননি তিনি। আড়াই বছর আগেই মন্ত্রিত্ব ছাড়তে চেয়েছিলেন। সে যাত্রায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তাঁকে নিরস্ত করেছিলেন। শুক্রবার বনমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এমনটাই জানালেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, দিনের পর দিন অপমানিত হয়েছেন। ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়েছে। সহ্যের সীমা পেরিয়েছিল। তাই মন্ত্রিত্ব ছাড়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তাঁকে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সকালেই চিঠি দিয়ে মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিয়েছেন রাজীব। ফেসবুকে তা নিয়ে ‘আবেগঘন’ পোস্টও লিখেছেন। তার পরেই রাজভবনে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের হাতে ইস্তফাপত্র তুলে দিতে যান। রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরে বেরনোর সময় সংবাদমাধ্যমের সামনে রীতিমতো ভেঙে পড়েন রাজীব। ধরা গলায় বলেন, ‘অনেক বেদনা নিয়ে ইস্তফা দিতে বাধ্য হলাম। সম্প্রতি সতীর্থদের কথায় অত্যন্ত আহত হয়েছি। ব্যক্তিগত আক্রমণও করা হয়েছে। আর নিতে পারছিলাম না, বিশ্বাস করুন।’ ধরা গলায় কথাগুলো বলার সময় চোখ মুছতে দেখা যায় রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

আড়াই বছর আগে রাজীবের হাত থেকে সেচ দফতরের দায়িত্ব নিয়ে নেওয়া হয়েছিল। সেই সময় ওই দায়িত্ব দেওয়া হয় শুভেন্দুকে। রাজীব দাবি করেছেন, তাঁকে না জানিয়েই ওই দিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তিনি তা মেনে নিতে পারেননি। রাজীবের কথায়, ‘আড়াই বছর আগে আচমকা দফতর বদল করে দেওয়া হয়েছিল। অত্যন্ত খারাপ লেগেছিল। সেই সময় ন্যূনতম সৌজন্যটুকুও দেখাননি মুখ্যমন্ত্রী। মন্ত্রী হিসেবে উত্তরবঙ্গে বৈঠক করছিলাম তখন। টিভিতে ব্রেকিং নিউজ দেখে জানতে পেরেছিলাম, আমার দফতর বদল হয়েছে। সে দিনই ইস্তফা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু উনিই নিরস্ত করেছিলেন।

তবে আড়াই বছর ধরে মনে ক্ষোভ পুষে রেখে হঠাৎ বিধানসভা নির্বাচনের আগেই কেন মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি? রাজীবের যুক্তি, ‘গত এক মাসে সতীর্থদের কথায় অত্যন্ত আহত হয়েছি। লাগাতার ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়েছে। এত আঘাত না পেলে হয়তো এমন সিদ্ধান্ত নিতাম না। ভাবিনি এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু আর পারছিলাম না। আমার সিদ্ধান্ত কাউকে আহত করলে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইছি। প্রতিদিন মনে প্রাণে আহত হচ্ছিলাম। আঘাত আর সহ্য করতে পারছিলাম না।’ তবে রাজীব যে এমন সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন তা প্রত্যাশিত ছিল বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। রাজীবের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। এমনকি তিনি কোনও কাজও করেননি বলে অভিযোগ করেন সৌগত। এই ব্যাপারে রাজীব বলেন, ‘মানুষ বিচার করবে কী কাজ করেছি। যত দিন বাঁচব, বাংলার মানুষের জন্যই কাজ করব। আমাকে সেই কাজের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য দলনেত্রীকে নতমস্তকে প্রণাম জানাই। এর বেশি কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই আমি।’ মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিলেও এখনও ডোমজুড়ের বিধায়ক পদ ছাড়েননি রাজীব। ছাড়েননি তৃণমূলের সদস্যপদও। তবে তিনি চলে গেলেও দলে কোনও প্রভাব পড়বে না বলে দাবি করেছেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

Related Articles

Leave a Comment