কলকাতা, ২৩ জানুয়ারি: ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নেতাজি জয়ন্তী পালনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাষণ দিতে উঠতেই ভেসে এল ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান। ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। ভাষণ না দিয়েই পোডিয়াম ছাড়লেন মুখ্যমন্ত্রী। এই ঘটনার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তাঁর অভিযোগ, নেতাজির জন্মদিনকে নিয়ে চূড়ান্ত রাজনীতি করল গেরুয়া শিবির৷ শুধু কুণাল নন, রাজনৈতিক মঞ্চের বাইরে মুখমন্ত্রীকে অপমান করায় সমালোচনায় সরব বাম-কংগ্রেসও। সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী, কংগ্রেসের অধীর চৌধুরীদের গলায় নিন্দার সুর।
নেতাজি জয়ন্তীকে সামনে রেখেই মেরুকরণের হওয়া আরও তীব্র। তৃণমূলের নেতাজি ও বিজেপির নেতাজি–এক তুল্যমূল্য রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। যেখানে নবান্ন বলছে ‘দেশনায়ক’ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনে জাতীয় ছুটি ঘোষণা করা হোক। দিল্লির সাউথ ব্লক সেই কথায় কান দেয়নি। কথায় কথায় ছুটি দেওয়া দিল্লির ধাতে নেই। দিল্লি আবার জানাল, কালকা মেলের নাম বদলে নেতাজি এক্সপ্রেস করা হল। সঙ্গে সঙ্গে নবান্নের ঘোষণা আজাদ হিন্দ মনুমেন্ট হবে কলকাতায়। তৃণমূল যখন নেতাজি জয়ন্তী ‘দেশনায়ক দিবস’ হিসেবে পালন করছে, তখন কেন্দ্র সরকার ২৩ জানুয়ারি দিনটা ‘পরাক্রম দিবস’ হিসেবে পালন করছে। আর সুভাষচন্দ্র বসুর ঐতিহ্য নিয়ে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অমর্যাদা হল নেতাজি জয়ন্তীতে সরকারি অনুষ্ঠান। এই টানাপোড়েন বিতর্কিত উচ্চতায় পৌঁছল। যেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য রাখার সময় ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি উঠল। প্রতিবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখলেন না মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর বিতর্কের জল গড়িয়ে চলল রাজনৈতিক চর্চা।
ভিক্টোরিয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘এটা অসভ্যতার চূড়ান্ত সংস্কৃতির নিদর্শন৷ বাংলার সংস্কৃতি জানে না বলেই এদের বহিরাগত বলা হয়৷’ তিনি বলেন, এক শ্রেণির চতুষ্পদ যাঁরা নেতাজির জন্মদিনে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিলেন তাঁরা জানেনই না এদিনটা ‘জয় হিন্দ’, ‘জয় নেতাজি’ বলার দিন৷ এটা গুটখা কালচার নয়৷ যা ঘটল তা বহিরাগত অপসংস্কৃতির নিকৃষ্ট নিদর্শন৷ আর বহিরাগত তত্ত্বটা অভিধানগত নয়, স্পিরিটগত সেটা প্রমাণিত হয়ে গেল৷’
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মদিবস উপলক্ষে ‘পরাক্রম দিবস’–এর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সামনেই সৃষ্টি হল এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। শনিবার বিকেল ৫টা নাগাদ সবে বক্তব্য শেষ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ সিং প্যাটেল। এর পরের বক্তা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডেকে নেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক। তিনি মঞ্চের চেয়ার ছেড়ে পোডিয়ামের দিকে এগোতেই সামনের সমবেত জনতার একাংশ ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে শুরু করে। যা শুনে দৃশ্যতই বিরক্ত হন মমতা। খানিক বিব্রত ঘোষক বলেন, ‘আপনারা একটু শান্ত হোন। ওঁকে (মমতাকে) কিছু বলতে দিন।’ কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। ক্ষুব্ধ মমতা পোডিয়ামের সামনে দাঁড়িয়ে প্রথমেই হিন্দিতে বলেন, ‘আমার মনে হয়, সরকারি অনুষ্ঠানের একটা শালীনতা থাকা উচিত। এটা কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি নয়। এটা সমস্ত দলেরই কর্মসূচি। জনতার কর্মসূচি।’ মমতা বলেন, ‘আমায় এখানে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু কাউকে আমন্ত্রণ করে অসম্মান করাটা শোভনীয় নয়। এর প্রতিবাদে আমি এখানে কিছু বলছি না।’ শেষে ‘জয় হিন্দ’, ‘জয় বাংলা’ বলে নিজের আসনে গিয়ে বসেন ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যখন এই ঘটনা ঘটছে, তখন সেখানে নীরবে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। পরে বলতে উঠে মোদী তাঁর ভাষণ শুরু করেন ‘বহেন মমতাজি’ বললেও অনুষ্ঠানের সুর-তাল আর জোড়া লাগেনি।