সাধারণ মানুষের জন্য শুরু হয়েছে গঙ্গার তলদেশে মেট্রো।
শুক্রবার সকালে ঐতিহাসিক যাত্রার সাক্ষী হয়েছেন অনেকেই। গঙ্গার তলদেশ দিয়ে যাওয়া মেট্রোর সফর ঘিরে স্বাভাবিক ভাবেই সাধারই মানুষের মধ্যে উত্তেজনা ছিল তবে যাত্রার প্রথম দিন সকালে সেই উত্তেজনা আরও ছড়িয়ে পরে। অফিসগামীদের পাশাপাশি, ভিড়ের মধ্যে অনেক উত্সাহী যাত্রী উপস্থিত ছিলেন, যারা গঙ্গার তলদেশে এই মেট্রো সফরের প্রথম যাত্রী হতে চেয়েছিলেন। শুধু কলকাতা এবং হাওড়া থেকে নয়, বিহারের মতো প্রতিবেশী রাজ্য থেকেও মানুষ এসেছিল। উত্তেজিত জনতা মধ্যরাত থেকে টিকিট কেনার জন্য হাওড়া ময়দান মেট্রো স্টেশন চত্বরে ভিড় জমায়। গত ৬ মার্চ গঙ্গার তলদেশে মেট্রো রুটের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একই দিনে, শহরের আরও দুটি মেট্রো রুটও উদ্বোধন করা হয়েছিল: জোকা-এসপ্ল্যানেড এবং নিউ গড়িয়া-রুবি। শহরের অন্য দুটি মেট্রো রুটের তুলনায়, ৪.৮ কিলোমিটার দূরত্ব জুড়ে এসপ্ল্যানেড-হাওড়া ময়দান রুটের জন্য যাত্রীদের মধ্যে উৎসাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল। মেট্রো কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে যে গঙ্গার তলদেশে ৫২০মিটার মেট্রো রুটে যেতে মাত্র ৪৫সেকেন্ড সময় লাগবে। নীল আলো নদীর তলদেশের টানেলকে আলোকিত করবে এবং ওই আলোই বুঝিয়ে দেবে মেট্রোটি এখন গঙ্গার নীচে আছে। অনেকেই প্রথম দিনেই এই নীল আলো দেখতে চেয়েছিলেন এবং ছবি তুলতে চেয়েছিলেন, যার ফলে ভিড় হয়েছিল প্রচুর রাত ২টো থেকে টিকিটের জন্য লাইনেও দাঁড়িয়েছিল যাত্রীরা। এসপ্ল্যানেড-হাওড়া ময়দান রুটের মেট্রো কর্তৃপক্ষও জনতার এই ভিড় দেখে খুশি। সূত্রের খবর কলকাতা মেট্রোর সিপিআরও কৌশিক মিত্র বলেন, ‘‘এই দিনটা দেখার জন্য মানুষ অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করেছিল। আমরা খুব গর্বিত। পরিবহণ ব্যবস্থায় বদল এসে গেল। হাওড়া থেকে যাতায়াত করার আর কোনও চিন্তা থাকল না। যুগান্তকারী পরিবর্তন। মানুষ এটাই চাইছিলেন। দু’টো-আড়াইটে থেকে মানুষ টিকিট কেটে দাঁড়িয়েছিল। আমরা কলকাতার মানুষের কাছেও কৃতজ্ঞ আমাদের উপর ভরসা রাখার জন্য।’’ এছাড়াও উত্তেজিত যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন বিহারের হাটবাজারের এক বাসিন্দা। তিনি বিহার থেকে এসেছিলেন প্রথম মেট্রো ধরতে। তাঁর কথায়, “আমি বিহার থেকে এসেছি। ভোর থেকে দাঁড়িয়েছিলাম এই মেট্রো চড়ব বলে। গঙ্গার নীচ দিয়ে যখন যাচ্ছিল, তখন খুব ভাল লাগছিল। আমি নীল আলোর ভিডিয়োও তুলেছি।’’গঙ্গার নীচে মেট্রো রুটে অনেক নতুন প্রযুক্তি রয়েছে, যার জন্য মেট্রো চালকরাও খুবই উচ্ছসিত। এসপ্ল্যানেড-হাওড়া ময়দান রুটের প্রথম চালক বিকাশ কর বলেন, “খুব ভাল অভিজ্ঞতা। অনেকে এসেছিলেন। রাত দু’টো থেকে প্রথম যাত্রী হওয়ার ভিড় ছিল। অনেক নতুনত্ব রয়েছে মেট্রোতে। জনগণ খুব খুশি। গঙ্গাকে এত কম সময়ে পার করে যাচ্ছি ভেবে অবাক লাগছে।’’ হাওড়া ময়দান-এসপ্ল্যানেড রুটের স্টেশনগুলি হল হাওড়া ময়দান, হাওড়া, মহাকরণ এবং এসপ্ল্যানেড। হাওড়া মেট্রো স্টেশনটি রেলওয়ে স্টেশনের পুরানো এবং নতুন কমপ্লেক্সের মধ্যে অবস্থিত। তাই পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথের যাত্রীরা মেট্রোর সুবিধা পাবেন। প্রথম মেট্রো সকাল ৭ টায়শুরু হবে এবং প্রতি সাত মিনিট অন্তর মেট্রো আসবে। শেষ মেট্রো রাত ৯টায়। মেট্রো সোমবার থেকে শনিবার পর্যন্ত চলে এবং রবিবার বন্ধ থাকে।