নিজস্ব প্রতিনিধিঃ সেই রণদেব বসুকেই সবথেকে প্রিয় সতীর্থর তকমা দিয়ে ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন অশোক ডিন্ডা। রণদেবের সঙ্গে মতবিরোধের জেরেই গত মরসুমে বাংলা ছেড়ে গোয়ায় চলে গিয়েছিলেন দিন্দা। মঙ্গলবার বঙ্গ ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা সিএবি-তে সাংবাদিক বৈঠক করে সব ধরণের ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন দেশের হয়ে খেলা এই পেসার।
দীর্ঘ ১৫ বছরের ক্রিকেট জীবনে মহম্মদ শামি, শিবশঙ্কর পাল, সৌরভ সরকারদের সতীর্থ জোরে বোলার হিসেবে পেয়েছেন দিন্দা। কে সবথেকে প্রিয় জানতে চাইলে অবসরের সময়ে তিনি বলেন, ‘সেরা বোলিং সঙ্গী অবশ্যই রণদেব। ম্যাকোদার (শিবশঙ্কর পাল) সঙ্গে বেশি খেলিনি। শামি অধিকাংশ সময়টাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেছে। সৌরভ সরকার খুব বেশিদিন বাংলার হয়ে খেলেনি। ফলে রণদেব ছাড়া এখানে আর কারও নাম আসে না।’ সদ্য সমাপ্ত সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতার পর উপলব্ধি করেন, ৩৭ বছর বয়সে জোরে বোলিং করার মতো জায়গায় শরীর আর নেই। বলেন, ‘এই বয়সে আমার পক্ষে আর খেলা সম্ভব নয়। মানিয়ে নিতে পারব না। তাই সব ধরণের ক্রিকেট থেকে সরে গেলাম।’ দিন্দার সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন সিএবি সভাপতি অভিষেক ডালমিয়া, সচিব স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় এবং দিন্দার স্ত্রী শ্রেয়সী। সিএবি-র পক্ষ থেকে তাঁকে একটি স্মারকও উপহার দেওয়া হয়।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১১৬টি ম্যাচ খেলে ৪২০ উইকেট রয়েছে দিন্দার। গড় ২৮.২৮। দেশের হয়ে ১৩টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ ও ৯টি টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। আন্তর্জাতিক উইকেট ২৯টি। মোট ৯৮টি ঘরোয়া একদিনের ম্যাচে ১৫১ উইকেট রয়েছে তাঁর। বিশেষ ধন্যবাদ জানান সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। দিন্দা বলেন, ‘২০০৫-০৬ মরসুমের রঞ্জি ট্রফির দলে আমাকে রাখা হয়নি প্রথমে। দাদার (সৌরভ) সুপারিশেই মহারাষ্ট্রর বিরুদ্ধে সেই বছর আমার অভিষেক হয়। এরপর দলীপ ট্রফি, আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্স বা পুনের হয়ে খেলার ক্ষেত্র্রেও দাদার বিরাট ভূমিকা ছিল।’ সৌরভ ছাড়াও মনোজ তিওয়ারি, লক্ষ্মীরতন শুক্লার অধিনায়কত্বে খেলেছেন। সৌরভকেই সেরা বাছলেন। দিন্দার বক্তব্য, ‘দাদাই সবথেকে বেশি উদ্বুদ্ধ করেছে। যেভাবে বোলারদের তাতিয়ে দিত, তাতে যে কোনও বোলার ভাল বল করতে বাধ্য।’
ক্রিকেট জীবনের সেরা মুহূর্ত হিসেবে বেছে নিলেন দুটি। এক, ভারতের হয়ে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে অভিষেক। দুই, বাংলার অনূর্ধ্ব ২১ দলের হয়ে ওড়িশার বিরুদ্ধে পারফরম্যান্স। জেতার জন্য মাত্র ৩৬ রান দরকার হলেও দিন্দার বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতে পারেনি ওড়িশা। অভিষেকের সময়ে অধিনায়ক হিসেবে পেয়েছিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে। সেই কথা তুলে ধরে দিন্দা বলেন, ‘ড্রেসিংরুমে তো ধোনির কাছে যখন খুশি যাওয়া যেত। হোটেলেও ওর ঘরের দরজা সবসময় আমাদের জন্য খোলা থাকত।’ সেরা উইকেট হিসেবে বাছলেন আইপিএলে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের বিরুদ্ধে ডেভিড ওয়ার্নারের উইকেট।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা এখনও সেভাবে করেননি। সাংবাদিক সম্মেলনেই সদ্য প্রাক্তন বঙ্গ পেসারকে অভিষেক ডালমিয়া প্রস্তাব দেন, সিএবি-র ক্রিকেট ট্যালেন্ট কমিটিতে যোগ দেওয়ার জন্য। দিন্দাও সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান। খুব স্বাভাবিকভাবেই একটা প্রশ্ন ওঠে, রাজনীতিতে তিনি যোগ দেবেন কিনা? দিন্দা জানিয়ে দেন, ‘অনেক প্রস্তাব আছে। ভাবিনি কী করব। এখন পেশাদার ক্রিকেটার নই। ফলে অনেক সময় আছে।’ একটা সময়ে লক্ষ্মীরতন শুক্লার ডাকে ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। দিন্দা বললেন, ‘আমার নিজের জায়গা মেদিনীপুর। সেখানে শুভেন্দু অধিকারীর সভাতেও যেতে পারি।’