নিজস্ব প্রতিনিধিঃ এ যেন প্রথম লেগের অ্যাকশন রিপ্লে। ৯০ মিনিট এগিয়ে থাকা ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে সেদিন ইনজুরি টাইমে জিকসন সিংয়ের গোলে সমতা ফিরিয়েছিল কেরালা ব্লাস্টার্স। আর শুক্রবার ভাস্কোর তিলক ময়দানে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। সেদিন শেষ মুহূর্তের গোলে হার বাঁচিয়েছিল কিবুর কেরালা। আর এদিন একইভাবে পয়েন্ট ছিনিয়ে নিল ইস্টবেঙ্গল। সেদিন কেরালার হার বাঁচিয়েছিলেন জিকসন সিং। একইভাবে শুক্রবার লাল-হলুদের এক পয়েন্ট নিশ্চিত করলেন স্কট নেভিল।
শুক্রবার গোটা ম্যাচেই আধিপত্য নিয়ে খেলল কিবু ভিকুনার দল। গত পাঁচটি ম্যাচের মতো ফাওলারের দলকে এদিন চেনা মেজাজে দেখা যায়নি। ব্রাইট এনোবাখারেও ছিলেন নিষ্প্রভ। তারপরেও স্কট নেভিল ইনজুরি টাইমে গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে একটা পয়েন্ট এনে দিলেন। ৬৪ মিনিটে জর্ডন মারের গোলে এগিয়ে থাকা কিবু ভিকুনার কেরালা ব্লাস্টার্স ৯৫ মিনিটে গোল হজম করে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে নিল লাল-হলুদের সঙ্গে। টপ ফোরের লড়াইয়ে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে এই ফলাফল কিছুটা হলেও ধাক্কা দু’দলের জন্যই। কারণ তিন পয়েন্ট পেলে লিগ টেবিলে অবস্থান বদলাত দু’দলের ক্ষেত্রেই। কেরালার বিরুদ্ধে ম্যাচটা জিতলে লিগ টেবিলে সাতে কিংবা আটে উঠে আসার সুযোগ ছিল লাল-হলুদের কাছে। পয়েন্ট ভাগ করে ফাওলারের সেই পরিকল্পনা ধাক্কা খেল কিছুটা। তবে শেষ বাঁশি বাজার আগে কর্নার থেকে নেভিলের গোলটা শেষ ছ’ম্যাচে অপরাজিত রাখল কলকাতা জায়ান্টদের। এদিন অপরবর্তিত একাদশ নিয়ে মাঠে নামতে চেয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। কিন্তু ম্যাচ শুরুর আগে ওয়ার্ম-আপের সময় কাফ মাসলে চোট পেয়ে প্রথম একাদশ থেকে ছিটকে যেতে হয় রাজুকে। পরিবর্তে রক্ষণে রানা ঘরামিকে নিয়ে শুরু করেন ইস্টবেঙ্গলের ব্রিটিশ কোচ।
প্রথমার্ধে তুল্যমূল্য লড়াইয়ে গোলের সুযোগ বেশি এসেছিল কেরালার কাছেই। তবে রাজুকে ছাড়াও ইস্টবেঙ্গল রক্ষণকে বেশ জমাটই মনে হচ্ছিল। দু’টি ক্ষেত্রে জর্ডন মারের ভলি রক্ষা পায় দেবজিতের দস্তানায়। প্রথম কয়েকটি ম্যাচের তুলনায় খানিকটা নিষ্প্রভ ব্রাইট এদিন ফাইনাল থার্ডে খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারেননি। মাঘোমা চেষ্টা করলেও সেই অর্থে পজিটিভ সুযোগ আসেনি লাল-হলুদের কাছে। একটি ক্ষেত্রে হরমনপ্রীতের শট ক্ষিপ্রতার সঙ্গে রক্ষা করেন কেরালা গোলরক্ষক আলবিনো গোমস। উত্তেজক ফুটবলে প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকার পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই ইস্টবেঙ্গল রক্ষণে চাপ বাড়ায় কেরালা। প্রথমার্ধে হলুদ কার্ড দেখা মিলন সিংকে তুলে নয়া রিক্রুট অজয় ছেত্রীকে নামান ফাওলার। পিলকিংটন শুরু থেকে না নামায়, পাশাপাশি মাত্তিও নিষ্প্রভ থাকায় মাঝমাঠে খেলা সেই অর্থে তৈরি হচ্ছিল না ইস্টবেঙ্গলের। উলটোদিকে আক্রমণে চাপ বজায় রেখে ৬৪ মিনিটে গোল তুলে নেয় কেরালা। প্রতি-আক্রমণে গোলরক্ষক আলবিনোর বাড়ানো ৬৯ মিটার লম্বা বল ধরে গতিতে রানা ঘরামিকে পরাস্ত করেন জর্ডান মারে। এরপর ডাবল টাচে দেবজিতকে পরাস্ত করেন তিনি। ফিনিশটা মোটেই ঠিকঠাক হয়নি অজি স্ট্রাইকারের। তবুও ম্যাচে এগিয়ে যায় কেরালা। সমতা ফেরাতে আক্রমণাত্মক ফাওলার ফক্সকে তুলে মাঠে নামান পিলকিংটনকে। সঙ্গে সুরচন্দ্র এবং রফিককেও নামান প্রায় শেষের দিকে। চেষ্টা করলেও কেরালা রক্ষণের ডেডলক ভাঙা একপ্রকার দুঃসহ মনে হচ্ছিল ইস্টবেঙ্গলের পক্ষে। স্টেইনম্যানের পরিবর্তে নামা হলওয়ে আরেকটু তৎপর থাকলে ফ্রি-কিকে মাথা ছুঁইয়ে সমতা ফেরাতেই পারতেন। কিন্তু পরিবর্তে বলে পা লাগাতে গিয়ে ব্যর্থ হন তিনি।
যখন মনে হচ্ছিল পাঁচ ম্যাচ পর ফের হারের ধাক্কা নেমে আসতে চলেছে ইস্টবেঙ্গল শিবিরে, তখনই নাটকীয় মুহূর্ত। গোটা ম্যাচে কার্যত নিষ্প্রভ থাকা ব্রাইট ৯৫ মিনিটে (৯০+৫) কর্নার থেকে একটি পিন-পয়েন্ট বল রাখেন গোলের সামনে। আর সেই বল ড্রপ হেডে জালে জড়িয়ে দেন অজি ডিফেন্ডার স্কট নেভিল। অজি ডিফেন্ডারের হেডেই এক পয়েন্ট নিশ্চিত করে লাল-হলুদ। ১১ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে ৯ নম্বরেই রইল এসসি ইস্টবেঙ্গল।