নিজস্ব প্রতিনিধিঃ মাঠে ও মাঠের বাইরে অগ্নিগর্ভ ইস্টবেঙ্গল। একদিকে, রেফারিদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের জেরে কোচ রবি ফাওলারের চার ম্যাচ নির্বাসন। অন্যদিকে, ফাওলারের সহকারী ও বন্ধু টনি গ্রান্টের টুইট ঘিরে তোলপাড় পরিস্থিতি। ক্ষোভের আগুন অনেক দিন ধরেই ধিকি ধিকি জ্বলছিল। ক্লাব কর্তা ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সংঘাত বারবার প্রকাশ্যে এসেছে। যদিও হেড কোচ রবি ফাওলার কিংবা তাঁর এসসি ইস্টবেঙ্গল দলের তরফ থেকে কেউ এই বিষয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করেননি। তবে এবার লাল-হলুদের অন্দরমহলের অসন্তোষ প্রকাশ্যে চলে এল।
বুধবার ক্লাবের পুরনো কর্তাদের বিরুদ্ধে কার্যত অন্তর্ঘাতের মতো মারাত্মক অভিযোগ তুলে দিলেন এসসি ইস্টবেঙ্গলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর টনি গ্রান্ট। সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো বিস্ফোরণ ঘটান রবি ফাওলারের সহকারী। মজার ব্যাপার হল গ্রান্টের এই টুইটকে পরোক্ষে পুরোপুরি সমর্থন করলেন ক্লাবের বিনিয়োগকারী শ্রী সিমেন্টের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হরিমোহন বাঙ্গুর। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, প্রথম দিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হলেও পরে নিজের টুইট সরিয়ে দেন গ্রান্ট। তাতে বিতর্ক বেড়েছে বই কমেনি। গ্রান্ট টুইটারে লিখেছিলেন, ‘বেশ বুঝতে পারছি ক্লাবের পুরনো কর্তারা আমাদের সমস্যায় ফেলতে চাইছেন। আশা করি, ক্লাব কর্তারা তাদের প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ করবেন না। এই অবস্থা মোটেও কাম্য নয়। এটা মেনে নেওয়া যায় না। শ্রী কর্তৃপক্ষ ক্লাব ও ফুটবলের উন্নতির জন্য এখানে এসেছে। এরপরেও যদি আপনারা ক্লাব কর্তাদের সঙ্গে থাকতে চান তাহলে সেটা ভেবে দেখুন।’ এখানেই না থেমে আরও একটি টুইটে লেখেন, ‘ইস্টবেঙ্গলে নতুন হলেও এই ক্লাবের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল। আইএসএল একটা নতুন মঞ্চ। তাই আমাদের সময় দেওয়া উচিত। আশা করি, সমর্থকরাও সেটা ভাল করেই জানেন।’
দলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর এমন বিস্ফোরক টুইট করলেও গ্রান্টের পাশেই থাকছেন শ্রী সিমেন্টের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হরিমোহন বাঙ্গুর। দুবাই থেকে ‘কলকাতা টুডে’-কে হোয়াটসঅ্যাপ কলে জানালেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না। টনি গ্রান্ট ভুল তো কিছু লেখেনি। সত্যি কথা লিখেছে। এখানে আমার আপত্তি থাকতে পারে না। তাই ওকে শোকজ করা বা শাস্তি দেওয়ার প্রশ্নই নেই।’ এর আগে একাধিকবার চুক্তি বিতর্কে শ্রী সিমেন্টের শীর্ষকর্তা বিচ্ছেদের হুমকি দিয়েছিলেন। এদিন সরাসরি বিচ্ছেদের কথা না বললেও বুঝিয়ে দিলেন, চুক্তির শর্ত না মানলে সম্পর্ক ভেঙে বেরিয়ে যেতে দু-বার ভাববেন না তাঁরা। পুরোনো ক্লাব কর্তাদের চুক্তিপত্রে সই এখনও ঝুলিয়ে রাখা প্রসঙ্গে হরিমোহন বাঙ্গুর বলেছেন, তাঁরা আর উদ্যোগী হবেন না। ক্লাব কর্তাদের এগিয়ে এসে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হতে হবে।
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সঙ্গে শ্রী সিমেন্টের মৌ-চুক্তি হওয়ার পর থেকে একটার পর ঝামেলা লেগেই আছে। টার্মশিটে সই করলেও শ্রী সিমেন্টের সব শর্ত মেনে মূল চুক্তিপত্রে এখনও সই করেননি দেবব্রত সরকাররা। ফলে ক্লাব-লগ্নিকারী বিচ্ছেদের জল্পনা দিনকে দিন বাড়ছে। এগুলো ফুটবলার ও সাপোর্ট স্টাফদের উপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। টনি গ্রান্টের টুইট সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ। চুক্তি বিতর্ক বা টনি গ্রান্টের বিতর্কিত টুইট নিয়ে লাল-হলুদ কর্তা দেবব্রত সরকারের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে ক্লাবের অপর এক কর্তা বললেন, ‘টনি গ্রান্ট কি টুইট করল তা নিয়ে আমাদের কোনও প্রতিক্রিয়া নেই। শুধু বলব, আমরা সমর্থকদের স্বার্থের কথা বলেছি। এগুলো সমর্থকদের দাবি। ন্যায্য দাবি এগুলো মানতেই হবে।’
শোনা যাচ্ছে, আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি আইএসএলের ফিরতি ডার্বির পর গোয়াতে দুই পক্ষ আলোচনায় বসতে পারে। কারণ ক্লাব ও বিনিয়োগকারী সংস্থার মধ্যে এই সঙ্ঘাত মোটেও ভাল চোখে দেখছে না এফএসডিএল। ইস্টবেঙ্গলে ক্লাব-বিনিয়োগকারী ঝামেলা নতুন নয়। দুই মরসুম আগে কোয়েস জমানায় একই ঘটনা বারবার ঘটেছিল। সেবারও তৎকালীন হেড কোচ আলেজান্দ্রো মেনেন্দেজ গার্সিয়া থেকে শুরু করে কোয়েসের চেয়ারম্যান অজিত আইজ্যাক বারবার ক্লাব কর্তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। এবার শুধু জুড়ে গেল রবি ফাওলারের সহকারীর নাম। যা ক্লাব বনাম ইনভেস্টর সংঘাতে নতুন মাত্রা যোগ করল।