নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রয় কৃষ্ণার রথে চেপে আইএসএলের ফিরতি ডার্বিতেও বাজিমাত করল এটিকে মোহনবাগান। প্রথম লেগের মতো দ্বিতীয় লেগের ডার্বিতেও এটিকে মোহনবাগানের কাছে ধরাশায়ী এসসি ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচের ফল ৩-১। নিজে একটি গোল করলেন রয় কৃষ্ণা। বাকি দুটি গোল করালেন ডেভিড উইলিয়ামস এবং জাভি হার্নান্দেসকে দিয়ে। যথারীতি ডার্বির নায়ক রয় কৃষ্ণাই। আর ১৮ ম্যাচে ৩৯ পয়েন্ট নিয়ে লিগে শীর্ষস্থান মজবুত করল এটিকে মোহনবাগান। এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার লক্ষ্যে আরও একধাপ এগোল হাবাসের দল।
নিজে খেলোয়াড়জীবনে ডিফেন্ডার ছিলেন বলেই রক্ষণ কীভাবে সাজাতে হয় জানেন আন্তনিও লোপেজ হাবাস। ধুরন্ধর স্প্যানিশ কোচ তাঁর স্ট্র্যাটেজিতে ধরাশায়ী করে দিলেন চির প্রতিদ্বন্দ্বীদের। ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ দুর্বল। সেই সুযোগ নিয়েই ফর্মে থাকা রয় কৃষ্ণার সঙ্গে জুড়ে দেন মার্সেলিনহো, উইলিয়ামস ও মনবীরকে। এতে যা হওয়ার তাই হল। দ্রুতগতির প্রতিআক্রমণ আর লং বলে খাবি খেল লাল-হলুদ রক্ষণ। পুরো ম্যাচে হাবাসের দলের আগ্রাসী ফুটবলের সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি রবি ফাউলারের দলের ফুটবলাররা। ১৮ ম্যাচে ৩৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবলের এক নম্বরে উঠল এটিকে মোহনবাগান।
প্রথম পর্বের ডার্বি হারের পর ইস্টবেঙ্গল কোচ রবি ফাউলারের ব্যাখ্যা ছিল, দল পর্যাপ্ত অনুশীলন করার সুযোগ পায়নি। আর শুক্রবার ফিরতি ডার্বি খেলতে নামার আগে নির্বাসিত ফাওলারের সহকারী টনি গ্র্যান্ট বলেছিলেন, ‘প্রথম লেগের ডার্বি ছিল অসম। এবার আসল খেলা হবে। আমরা তৈরি।’ কিন্তু আইএসএলে নিজেদের ১৮ নম্বর ম্যাচ খেলতে নামার পরেও দেখা গেল, লিভারপুলের প্রাক্তন কিংবদন্তি আসলে তাঁর দলকে তৈরিই করতে পারেননি। তারই প্রতিফলন বারবার করে ধরা পড়ল শুক্রবার বছরের শেষ ডার্বিতে। এমনিতে বলিভিয়ার প্রাক্তন কোচ আন্তনিও লোপেস হাবাস নিজের রক্ষণকে সুরক্ষিত রেখে পাল্টা আক্রমণে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার দর্শনে বিশ্বাসী। কিন্তু তিনিও যে নিজের প্রথার বাইরে গিয়ে ফাউলারের দলকে ঘায়েল করার পরিকল্পনা সেরে রেখেছেন, তার ইঙ্গিত ছিল বৃহস্পতিবারের সাংবাদিক সম্মেলনে। এদিনের ম্যাচে সেই ছবিটাই স্পষ্ট হয়ে উঠল। আপাতভাবে দেখে মনে হচ্ছে হাবাস ৩-৪-৩ ছকে দলকে খেলাচ্ছেন। কিন্তু আসলে খেলছে চার স্ট্রাইকার। কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামস, মার্সেলিনহো-র সঙ্গে রেখেছিলেন মনবীর সিংহ-কে। সেখানে ভাঙাচোরা রক্ষণ নিয়ে ফাউলার দল সাজালেন ৩-৪-১-২ ছকে। বোঝাই গেল, এত দিন হয়ে গেলেও কোচ ফাউলারের দর্শনে প্রচুর ফাঁক রয়েছে। আর সেই লড়াইটা শেষ হয়ে গেল ম্যাচের ১৫ মিনিটেই। নিজেদের অর্ধ থেকে সবুজ-মেরুন ডিফেন্ডার তিরি-র লম্বা সেন্টার কৃষ্ণা ডান পায়ের টোকায় লাল-হলুদ ডিফেন্ডারদের গতিতে পিছনে ফেলে বল নিয়ে যখন এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই স্পষ্ট হয়ে যায় গোল নিশ্চিত। পেনাল্টি বক্সে ঢুকে বাঁ-পায়ের টোকায় এগিয়ে আসা গোলরক্ষক সুব্রত পালকে কাটিয়ে ডান পায়ের নিখুঁত শটে দ্বিতীয় পোস্ট দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন বাগানের গোলমেশিন।
খেলার বিপরীতে গিয়ে গোল তুলে নিয়েছিল এসসি ইস্টবেঙ্গল। রাজু গায়কোয়াড়ের লম্বা থ্রো ক্লিয়ার করতে গিয়েছিলেন তিরি। বল তাঁর মাথায় পিছনে লেগে নিজেদেরই জালে জড়িয়ে যায়। সমতা ফিরিয়ে রক্তের স্বাদ পাওয়া লাল-হলুদ ফের আক্রমণ হানিয়েছিল। সে সময় সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে এগিয়েও যেতে পারত। কিন্তু ওই পর্যন্তই। রয় কৃষ্ণার হেড সুব্রতর হাতে জমা পড়ার পর তিনি তা পাস দেন ফক্সকে। ফক্স আর এক সতীর্থকে পাস দেওয়ার আগেই তা কেড়ে নেন কৃষ্ণা। দ্রুত বাঁ দিকে থাকা উইলিয়ামসকে পাস দেন। জোরালো নিচু শটে দলকে এগিয়ে দেন উইলিয়ামস। তৃতীয় গোলের পিছনেও দায়ী লাল-হলুদ রক্ষণ। বল ধরে কর্নারের কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন কৃষ্ণা। সেই সময় তাঁকে জায়গা দিয়ে ক্রস করার সুযোগ দেন নারায়ণ। তিন ডিফেন্ডারকে ঘাড়ে নিয়ে বক্সে লাফিয়ে উঠে জোরালো হেডে তৃতীয় গোল করেন জাভি।