উৎসবহীন বেথলেহেম
ভয় ও অনিশ্চয়তার ছায়ায় অন্ধকারাচ্ছন্ন পৃথিবীতে যীশুর জন্ম সবচেয়ে শক্তিশালী চিহ্ন এবং আশার বার্তা। 2023 সালের ক্রিসমাসের জন্য, ভ্যাটিকান রেডিও ধর্মীয় নেতাদের এবং খ্রিস্টান দাতব্য সংস্থার প্রধানদের থিমের উপর ভিত্তি করে তারা জানান, “প্রভুর জন্ম শান্তির জন্ম।” আজকের বার্তাটি পবিত্র ভূমির ফ্রান্সিসকান কাস্টোস ফ্রান্সিসকো প্যাটন, OFM থেকে এসেছেপ্রিয় বন্ধুরা, এই বছর বেথলেহেমের গ্রোটো খালি, যেমন শহরের রাস্তা এবং স্কোয়ারগুলি রয়েছে৷মরিয়ম এবং জোসেফ যখন নিবন্ধন করতে এসেছিলেন, তখন তাদের জন্য একটি ঘরও ছিল না।
আজ বেথলেহেমের সমস্ত ঘর ভর্তি, , তীর্থযাত্রীদের ফিরে আসার জন্য, আলোকসজ্জা এবং উদযাপনে শিশুদের কণ্ঠস্বর আবার শহরের রাস্তাগুলি উজ্জ্বল হয়ে উঠুক এখন সবাই সেই যুদ্ধ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় ।
গাজ়ার যুদ্ধে হাজার হাজার শিশু-হত্যার প্রতীকী প্রতিবাদ
ভিয়েতনামের নাগরিক জন ভিন গত ছ’বছর ধরে জেরুসালেমে থাকেন। বড়দিনের সময়ে প্রতি বছর তিনি বেথলেহেমে আসেন। তিনি বললেন, ‘‘এ বছর কোনও ক্রিসমাস ট্রি নেই, আলোর রোশনাই নেই, শুধুই অন্ধকার ছেয়ে।’’ বরং ম্যাঙ্গার স্কোয়ারে শুধু গাজ়ার প্রতিচ্ছবি। বড় বড় ধূসর পাথরের চাঁইয়ের উপরে শুয়ে ‘জিশু-শিশু’। সাদা কাপড়ে মোড়ানোর তার দেহ। গাজ়ার যুদ্ধে হাজার হাজার শিশু-হত্যার প্রতীকী প্রতিবাদ। ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক ও জেরুসালেমে ৫০ হাজার খ্রিস্টানের বাস। গাজ়াতেও আনুমানিক ১৩০০ খ্রিস্টান থাকেন। অসহায় অবস্থায় রয়েছেন সেই সব প্যালেস্টাইনি খ্রিস্টানরা। নিজেরা অক্ষত থাকলেও পরিবার-পরিজনের চিন্তায় দুঃসহ জীবন। ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের বাসিন্দা, বেথলেহেমের ব্যবসায়ী সমিতির কর্ত্রী সুজ়ান সাহোরি বলেন, ‘‘মনের মধ্যে আর কোনও আনন্দ নেই। ঈশ্বরের কাছে জানতে ইচ্ছে করে, কেন এত শিশুকে মরতে দিচ্ছেন উনি? …ঈশ্বরের উপরেও রাগ হচ্ছে। উনি আমাকে মাফ করুন।’’
জেরুসালেমের গির্জাগুলিতে এ বছর উৎসব সেভাবে করা হবে না
সূত্রের খবর জেরুসালেমের গির্জাগুলিতে এ বছর উৎসব সেভাবে করা হবে না। শুধুমাত্র ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানেই নজর দেওয়া হচ্ছে। গাজ়ায় নিহতের সংখ্যা প্রায় ২০,৪২৪ ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, জখম ৩৮৪ জন। জানা যাচ্ছে শুধু নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা ১০৩। ২৩ লক্ষ মানুষ ঘরহারা।এই যুদ্ধের প্রভাব বিস্তার করেছে বেথলেহেম-সহ অন্য প্যালেস্টাইনি শহরগুলোতেও। একরকম ঘুম কেড়ে নিয়েছে শহরবাসীর ।ইজ়রায়েল অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে জায়গায় জায়গায় মিলিটারি চেক পয়েন্ট বসানো হয়েছে। সেখানে রয়েছে যানবাহনের লম্বা লাইন। সেনার নজর এড়িয়ে কেউ ঢুকতে-বেরোতে পারবেন না।
জানা যাচ্ছে প্যালেস্টাইনের এই সব জায়গার অনেক বাসিন্দাই ইজ়রায়েলের শহরগুলিতে কাজ করেন। কিন্তু এখন তাঁদের ইজ়রায়েলে ঢোকার অনুমতি নেই। ফলে কাজ হারিয়ে এই মুহূর্তে ঘরবন্দি অনেকেই।
বেথলেহেমের অর্থনীতির জন্যেও একটি বড় ধাক্কা
বড়দিনের উৎসব বাতিল হওয়ার কারনে বেথলেহেমের অর্থনীতির জন্যেও একটি বড় ধাক্কা। বাসিন্দাদের ৭০ শতাংশ উপার্জনই হয় বছরের এই সময়টাতে। বেশির ভাগ এয়ারলাইন্স উড়ান বাতিল করে দিয়েছে। হাতেগোণা কিছু বিদেশি পর্যটক দেখা গিয়েছে শহরে।বেথলেহেমের ৭০টি হোটেল জোর করে বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। তাতেও হাজার খানেক মানুষ কাজ হারিয়েছেন। আলা সালামে নামে এক রেস্তরাঁ মালিক বললেন, ‘‘গাজ়ায় মানুষের মাথার উপরে ছাদ নেই। এত মৃত্যু… উৎসব করার
কোনও অর্থ খুঁজে পাচ্ছি না।’’ তার মতে, প্রতি বছর এই সময়টা সবচেয়ে বেশি ব্যস্ততার মধ্যে কাটে। একটা চেয়ার ফাঁকা পাওয়া যায় না। সেখানে এ দিন সন্ধ্যায় একটি মাত্র চেয়ারেই লোক বসে। তা-ও এক সাংবাদিক, বৃষ্টি থেকে মাথা বাঁচাতে কিছু ক্ষণের জন্য আশ্রয় নিয়েছেন।